অয়ন ঘোষাল, সোমা মাইতি, মৌমিতা চক্রবর্তী: হিংসা-কবলিত মুর্শিদাবাদে মুখ্যমন্ত্রী! প্রত্যাশা ছিলই। ছিল বিরোধীদের দাবিও। এমনকি স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও যাবেন বলে মন্তব্য করেছিলেন। দীঘা-সফর থেকে ফিরে এবার তিনি যাচ্ছেন মুর্শিদাবাদ। আজ, সোমবার সুতিতে একটি সভা করবেন তিনি। আগামীকাল, মঙ্গলবার যাবেন ধুলিয়ান, যাবেন শামশেরগঞ্জেও।
১২ দিন আগেই
মে মাসের শুরুর দিকে তিনি মুর্শিদাবাদের উপদ্রুত এলাকায় যাবেন, এই কথা মুখ্যমন্ত্রী নিজেই প্রায় ১২ দিন আগে জানিয়েছিলেন। সেইমতোই আজ, সোমবার দুপুরের দিকে ডুমুরজলা হেলিপ্যাড থেকে চপারে উঠে বহরমপুর হেলিপ্যাডে নামবেন তিনি। যাত্রা শুরুর ঠিক আগে তিনি বললনে, 'আগেই যেতে পারতাম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পরই যাওয়া উচিত। ঘরছাড়ারা এলে কথা বলব। আগামীকাল ধুলিয়ান যাব। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করব। শান্তি ফেরার পরেই মুর্শিদাবাদ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিরাপত্তার বিষয়ে কেন্দ্রের পাশে আছে রাজ্য।'
সূত্রের দাবি, আজ, সোমবার রাতে বহরমপুরে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামীকাল মঙ্গলবার সড়কপথে তিনি যাবেন শামশেরগঞ্জে। আগেই অনুমান ছিল-- বেদবোনা দীঘরী জাফরাবাদ-সহ একাধিক উপদ্রুত এলাকায় মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারেন তিনি। দিতে পারেন ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর দ্রুত মেরামতির নির্দেশও।
নবান্ন
এলাকায় শান্তি ফেরাতে ইতোমধ্যেই জেলা পুলিসে প্রয়োজনীয় রদবদল করেছে নবান্ন। এরই মধ্যে রাজ্যপাল উপদ্রুত এলাকায় কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের পরামর্শ দেওয়ায় নতুন করে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। এদিকে জাফরাবাদ এলাকায় মৃত হরগোবিন্দ এবং চন্দন দাসের পরিবারের সদস্যরা, যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণের চেক নিতে অস্বীকার করেছিলেন, তাঁরা এই মুহূর্তে কলকাতায়। এই আবহে কী বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী, সবার নজর সেদিকে।
সোমবিকেলে মুর্শিদাবাদে মুখ্যমন্ত্রী
সোমবার বিকেলে মুর্শিদাবাদ পৌঁছবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই কারণে অতিরিক্ত নিরাপত্তা-বলয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে শামসেরগঞ্জ, সুতি-সহ জঙ্গিপুর পুলিস জেলার সমস্ত এলাকা। চলছে নাকা চেকিং। রবিবার রাতভোর রাজ্য পুলিসের উদ্যোগে বর্ডার এলাকা-সহ স্পর্শকাতর এলাকায় চলেছে নাকা চেকিং। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, রঘুনাথগঞ্জ থানার রঘুনাথগঞ্জ লালগোলা রাজ্য সড়ক, রঘুনাথগঞ্জ সাগরদিঘী রাজ্য সড়ক, জঙ্গিপুর বীরভূম রাজ্য সড়ক, জঙ্গিপুর ঝাড়খণ্ড রাজ্য সড়কের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিপুর পুলিসের কড়া নজরদারি রয়েছে। রবিবার রাত্রে এমনই ছবি ধরা পড়ল।
মহম্মদ সেলিম
এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর মুর্শিদাবাদ-সফর নিয়ে খড়্গহস্ত রাজ্য বামফ্রন্ট। সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, 'মুর্শিদাবাদের আগুন বিজেপি-তৃণমূলের তৈরি করা, নজর ঘোরাতে। মুখ্যমন্ত্রী মুর্শিদাবাদে যাচ্ছেন আর বিজেপি টাকার জোরে মৃতের পরিবারকে টানাটানি করছে। ওখানকার মানুষের উচিত মুখ্যমন্ত্রীকে বিক্ষোভ দেখানো।' মহম্মদ সেলিম আরও বলেন, 'বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। গোয়েন্দা রিপোর্ট থাকার পরেও পুলিস কিছুই করেনি। ভাঙা ডিমে তা দিয়ে কিছুই হবে না। পরিবার কারওর বাঁধা নয়। টাকার জোরে টানছে। শোকে রয়েছেন ওঁরা। আমরা এই নোংরা রাজনীতি করি না, করিনি। মমতা-শুভেন্দু একই রাজনীতি করছে। কোনো ৫৬, ৩৫৬, গরু-বলদ-মোষ বাংলার সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। রাজভবনকে ব্যবহার করছে। কেন্দ্রের কোনো দালাল ঠিক করবে না।'