বুদ্ধদেব বেরা
দুয়ারে নতুন বউ। বরণ ডালা নিয়ে অপেক্ষায় শাশুড়ি। উলু উলু রব চারিদিকে। শাঁখ হাতে পাশেই ছোট জা। নবদম্পতিকে নিয়ে হইহই শুরু সকলের। ‘দিলীপ দা তা হলে সত্যিই বিয়ে করেছে’ মেনে নিলেন দিলীপের ছোট ভাই হীরকও। সোমবার দিনভর উৎসবের মেজাজ দেখা গেল ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের দিলীপ ঘোষের পৈতৃক ভিটেতে। পঞ্চ ব্যঞ্জন সাজিয়ে ছিল ভোজের আয়োজনও।
নতুন বউকে নিয়ে ঘরের ছেলে দিলীপ আসছে, খবর ছিল আগেই। বড় দাদা মুরারিমোহন ঘোষ, সেজ ভাই দীপক ঘোষ, ছোট ভাই হীরক ঘোষ এবং ওডিশায় বারিপাদায় মামাবাড়ির আত্মীয়রা কুলিয়ানার বাড়িতে হাজির সকলে। নতুন বউ বাড়িতে আসবে বলে বাড়ির তিন বউ প্রীতি, গঙ্গা, সুপর্ণারা হাতে হাত মিলিয়ে রান্নার কাজে লেগে পড়েন সকাল থেকেই। দিলীপের মা পুষ্পলতা ঘোষ নতুন বউকে বরণ করে ঘরে তোলেন।
কী বললেন ভাই হীরক?
দাদা’র বিয়ের খবর পেয়ে ছোট ভাই হীরক বলেছিলেন, ‘দাদা মাঝেমধ্যেই নানা সিদ্ধান্ত নেন। নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাসই করব না যে ও বিয়ে করেছে।’ চাক্ষুস নবদম্পতিকে দেখে এ দিন হীরক বলেন, ‘দাদা বউদিকে একসঙ্গে দেখে আমরা খুবই খুশি। এ বার মনে হল দাদা সত্যি বিয়ে করেছে। আমাদের নতুন বৌদি খুব ভালো। খুব মিশুকে। মুহূর্তের মধ্যেই যেন সকলকে আপন করে নিয়েছে।’
রান্নার কী আয়োজন?
কাঠফাটা গরম কাল। তাপমাত্রা এ দিনও ৩৫ ছুঁইছুঁই। কড়া পাকের রান্না নৈব নৈব চ। সাধারণ বাঙালি বাড়ির খানা-পিনা ছিল মেনুতে। সাদা ভাত, ডাল, নিম বেগুন ভাজা, শাক ভাজা, পটল ভাজা, বড়ি ভাজা, বেগুন ভাজা , এঁচোড়ের ডালনা ছিল। সঙ্গে সরষে ইলিশ। কলকাতা থেকেই বড় মাপের তিনটি ইলিশ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন দিলীপ। এর সঙ্গে চাটনি, মিষ্টি তো রয়েছে।
কী বললেন নববধূ?
শ্বশুরবাড়িতে প্রথম পা রাখার দিন একটা ভয়, উৎকণ্ঠা থাকে সকল নববধূরই। তবে এ দিন সদা হাসিমুখ ছিল দিলীপ জায়ার। বাড়ির অন্য বউদের সঙ্গে খুনসুটি, গল্পগুজব তো ছিলই। গ্রামের পরিবেশ দেখে বেজায় খুশি তিনি। রিঙ্কু বলেন, ‘আমি শুনেছিলাম সুবর্ণরেখা নদীর তীরে ওঁর (দিলীপ ঘোষ) বাড়ি। আসার খুব ইচ্ছে ছিল। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। চারিদিকটা ঘুরে দেখলাম। মানুষগুলো খুব ভালো।’
দিলীপ গ্রামে ঢুকে প্রথমেই যান তাঁর কাকুর বাড়ি। সেখান থেকে গ্রামের মধ্যে থাকা জগন্নাথ মন্দির এবং তাঁদের কুলো দেবতা শিব মন্দির দর্শন করে বাড়িতে যান। রাজনীতির কচকচানি থেকে এ দিন শত যোজন দূরত্ব বজায় রাখলেন রাজ্য রাজনীতিতে বর্তমানে সবথেকে চর্চিত নেতা। তবে, এই দিনটার অপেক্ষাতেই ছিলেন দিলীপের মা পুষ্পলতা দেবী। তাঁর ইচ্ছেতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন আদরের ‘নাড়ু’। আজ বললেন, ‘আজ আমার সবচেয়ে খুশির দিন। চার ছেলে বউমা এক সঙ্গেই বাড়িতে রয়েছে।’