উচ্চতা মাত্র দু’ফুট, প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে মাধ্যমিকে ৫৫৩ নম্বর জলপাইগুড়ির নয়নের
বর্তমান | ০৬ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: কোমর থেকে শরীরের নীচের অংশ অসাড়। হাঁটতে পারে না। কোনওদিন বাবার কোলে চড়ে, কখনও আবার বন্ধুদের কোলে চড়ে স্কুলে এসেছে। উচ্চতা দু’ফুট। কিন্তু শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করেই মাধ্যমিকে ৫৫৩ নম্বর (৭৯ শতাংশ) পেয়ে তাক লাগাল জলপাইগুড়ির নয়ন দত্ত।
জলপাইগুড়ি বাহাদুর মুন্নাস হ্যাপি হোম স্কুলের পড়ুয়া নয়ন। জলপাইগুড়িতে মাধ্যমিকের ‘খারাপ’ ফলে যখন মুষড়ে পড়েছে শিক্ষামহল, সেখানে পড়াশোনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নয়নের অদম্য লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন জেলাবাসী।
গত শুক্রবার বন্ধু রাকেশ শর্মার কোলে চেপে স্কুলে রেজাল্ট নিতে আসে জলপাইগুড়ির রাহুতবাগান এলাকার বাসিন্দা নয়ন। সঙ্গে ছিলেন তার বাবা সৌমেন দত্ত। বাড়িতেই একটি মুদি দোকান চালান তিনি। কখনও আবার কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। অভাবের সংসার। কিন্তু ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হতে দেননি।
স্কুলের সামনে বন্ধু নয়নকে কোলে নিয়ে একগাল হেসে রাকেশ জানায়, মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৫২১। কিন্তু নয়ন ৫৫৩ পেয়েছে। এতে তার খুশি দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। ভালো নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরতে পেরে খুশি নয়ন। তার কথায়, সব বাধা টপকে আমি পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ভবিষ্যতে প্রশাসনিক পদে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছে রয়েছে।
ডাক্তারি পরিভাষায় নয়নের লোকোমোটর ডিজেবিলিটি ও ডোয়ারফিজম রয়েছে। যাকে এককথায় বামন বলে। শরীরের হাড়গোড় একেবারেই ভঙ্গুর। বাড়ি থেকে নয়নের স্কুল ৫ কিমি দূর। যদিও স্কুলে আসার ক্ষেত্রে দূরত্ব কোনও বাধা হয়নি তার। যেদিন পরিবারের কেউ সময় পাননি, সেদিন বন্ধুরা বাড়ি গিয়ে কোলে করে স্কুলে নিয়ে এসেছে নয়নকে। উচ্চতা কম হওয়ায় শিক্ষকরা তাকে হাই বেঞ্চের উপর বসে ক্লাস করার অনুমতি দিতেন।
সবমিলিয়ে নয়নের অদম্য লড়াইয়ে সবসময় পাশে থাকার সাহস জুগিয়েছেন তার স্কুলের শিক্ষকরা। পড়াশোনার পাশাপাশি নাটকে তার অভিনয় ইতিমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে জেলাবাসীর। জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে নাটকে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করেছে সে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক তনয়কান্তি দাস বলেন, ছেলেটি পড়াশোনায় খুবই ভালো। নাটকে দারুণ অভিনয় করে। ওর জন্য আমরা সবাই গর্বিত। আগামী দিনে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ওকে যাতে কোনও প্রতিবন্ধকতার সামনে পড়তে না হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তবে এতকিছুর মাঝেও কিছুটা আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে নয়নের। তার কথায়, ভেবেছিলাম ৬০০ নম্বর পাব। তবে হাল ছাড়ছি না। মাধ্যমিকে নম্বর কম পাওয়ার আক্ষেপ উচ্চ মাধ্যমিকে পুষিয়ে নিতে চাই। নিজস্ব চিত্র।