নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: পিএফ অফিসে সক্রিয় দালালরাজ! সোমবার শিলিগুড়িতে পিএফ অফিস অভিযান কর্মসূচিতে এমন অভিযোগ করেছেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। একই সঙ্গে তিনি দালালদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান। এদিকে, শিলিগুড়িতে ১৩টি চা বাগানের কয়েক হাজার শ্রমিকের কোটি কোটি টাকার পিএফ বকেয়া রয়েছে বলে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের দাবি।
এদিন শিলিগুড়িতে রিজিওনাল পিএফ অফিস চত্বরে শ্রমিক সমাবেশ করে আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়ন। সমাবেশে শ্রমমন্ত্রী বলেন, পিএফ অফিস কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। সংশ্লিষ্ট অফিসে দালাল ছাড়া কোনও কাজ হয় না বলে অভিযোগ। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে নির্বিকার বিজেপি নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় সরকার। কাজেই, কেউ টাকা চাইলে দেবেন না। আমাদের জানান। এফআইআর করা হবে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, সর্বদা শ্রমিকদের পাশে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি শ্রমিক বিরোধী। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করুন।। তাহলে শ্রমিকরা মজবুত হবে। পাশাপাশি, ওই সমাবেশে বিজেপি ও সিপিএমকে আক্রমণ করেন আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি তথা সংসদ সদস্য ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রত্যাশা, ছাব্বিশের নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে থাকবে চা বাগান। এদিনের সমাবেশে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণমন্ত্রী বুলুচিক বরাইক সহ উত্তরবঙ্গের শ্রমিক নেতারা হাজির ছিলেন।
এদিকে, এদিন দালালরাজ ভাঙা সহ ১০ দফা দাবিতে পিএফ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়ন। তরাই এলাকায় ৪৮টি বড় চা বাগানে শ্রমিক সংখ্যা কয়েক হাজার। অধিকাংশ শ্রমিকের পিএফ নিয়মিত জমা পড়ছে না। ৭০টি বটলিফ কারখানার প্রায় ৭০ শতাংশ শ্রমিকের পিএফ নেই বলে অভিযোগ। এরবাইরে ৩০০টি ছোট বাগানের শ্রমিকদেরও পিএফ চালু হয়নি বলে অভিযোগ।
আইএনটিটিইউসির দার্জিলিং জেলা সভাপতি (সমতল) নির্জল দে বলেন, একটি বাগানে ২০০০ শ্রমিকের বকেয়া পিএফের পরিমাণ ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। সেই বাগানের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং ছ’বছর ধরে কিস্তিতে ওই টাকা জমা করার জন্য অভিযুক্ত বাগান কর্তৃপক্ষকে সুযোগ দিয়েছে পিএফ অফিস। শ্রমিকদের স্বার্থ না দেখে এভাবে পিএফ অফিসের একাংশ বাগান কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শ্রমিকদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা তুলছে কিছু দালাল। এই চক্র ভাঙা, পিএফ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করা, শ্রমিকদের পিএফ অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধারকার্ডের মিসম্যাচ নিষ্পত্তি করা সহ বিভিন্ন দাবি কমিশনারের কাছে জানানো হয়েছে।
রিজিওনাল পিএফ কমিশনার শৈলেন্দ্রনারায়ণ ঝা অবশ্য বলেন, বর্তমানে এই অফিসে সমস্ত কাজকর্ম অনলাইনে হচ্ছে। সকলকে এই পন্থা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কাজেই এখানে দালাল চক্রের অভিযোগ ঠিক নয়। আর পিএফ খেলাপিদের তালিকার জন্য আন্দোলনকারীদের আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদন করলেই তারা তা পাবে। আধারকার্ড সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে চিঠি পাঠানো হবে। নিজস্ব চিত্র।