• সাংসদ ও বিধায়কদের জনসংযোগ বাড়ানোর বার্তা মমতার
    বর্তমান | ০৬ মে ২০২৫
  • অভিষেক পাল, বহরমপুর: মুর্শিদাবাদ জেলায় সাম্প্রতিক যে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না হয়, তা নিশ্চিত করতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বহরমপুরে ওই বৈঠকে সাংসদ, বিধায়ক এবং প্রশাসনিক আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে বৈঠক হয়। জানা গিয়েছে, সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী নেতাদের উদ্দেশে প্রশ্ন তোলেন, জেলায় এত ঝামেলা হয়, আপনারা কী করছেন? প্রশাসনের আধিকারিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের আরও সক্রিয় হওয়া দরকার ছিল। বিধায়ক, সাংসদদের বলেন, শুধু ভোটে জিতলাম আর বসে গেলাম, সেটা হবে না। এলাকায় যান এবং মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান। বৈঠক থেকেই মুখ্যমন্ত্রী জেলার কাজকর্ম এবং সার্বিক এই ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির জন্য প্রায় ১৫ জনের একটি কমিটি তৈরির নির্দেশ দেন। সেই কমিটিতে মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার সংখ্যালঘু এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের রাখার কথা বলেন।

    সোমবার দুপুর ১টা নাগাদ বহরমপুর ব্যারাক স্কয়ার ময়দানের হেলিপ্যাডে নামেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ সেরেই চলে যান উল্টো দিকের সার্কিট হাউসে। মিনিট দশকের মধ্যেই সার্কিট হাউস থেকে তাঁর কনভয় ছোটে ৬০০ মিটার দূরে জেলা প্রশাসনিক ভবনে। সারপ্রাইজ ভিজিট! প্রশাসনিক ভবনের গেটে তিনি গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। হেঁটেই মুর্শিদাবাদ জেলা রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির তৈরি নতুন ভবনে ঢুকে যান। সেখানকার কর্মীদের সঙ্গে তিনি আলাপচারিতা সারেন। ততক্ষণে দলীয় নেতা-কর্মীরা খবর পেয়ে যান মুখ্যমন্ত্রীর গন্তব্য কোথায়। সার্কিট হাউস থেকে নেতাদের কেউ হেঁটে, কেউ ছুটতে ছুটতে পৌঁছন জেলা প্রশাসনিক ভবনে। মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ, জেলার একাধিক বিধায়ক, পুরসভার চেয়ারম্যান, মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি এবং জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে তিনি সেখানেই রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেখানে বিধায়ক হুমায়ুন কবীর কয়েকজন নেতার নামে অভিযোগ করতে শুরু করলে তাঁকে থামতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সকলকে মিলেমিশে কাজ করার বার্তা দেন। 

    বৈঠক শেষে রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তথা বিধায়ক আখরুজ্জামান বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন এলাকার মানুষের সঙ্গে আরও জনসংযোগ বাড়াতে হবে। সকলে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সেই দিকেও কড়া নজর রাখার কথা বলেছেন। 

    জেলা পরিষদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা বলেন, জেলায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য মুখ্যমন্ত্রী একাধিক নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। একটা কমিটি গঠন করার কথাও বলেছেন। সেই কমিটি যাবতীয় কাজকর্ম দেখার পাশাপাশি এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, তা আগে থেকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবস্থা নেবে। মাঝেমধ্যে ওই কমিটি বৈঠক করবে। 

    বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল সভাপতি তথা বিধায়ক অপূর্ব সরকার বলেন, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মানুষের সঙ্গে আরও বেশি করে মেশার কথা বলেছেন দিদি। সকলস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে হবে।

    ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী সার্কিট হাউসে ফিরে আসেন। তারপর হঠাৎ সেখান থেকে বেরিয়ে উল্টো দিকের গান্ধী কলোনির এক মৃৎশিল্পীর বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলার মাঝেই একটি শিব ঠাকুরের মূর্তিতে মালা পরিয়ে দেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে কথা বলায় খুশি শিল্পীরা।
  • Link to this news (বর্তমান)