• ভোট-ভাবনা নেই, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত পুরুলিয়ার তৃণমূল
    বর্তমান | ০৬ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: ঠেকেও শিক্ষা হল না!  বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। অথচ, এখনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ পুরুলিয়া পুরসভায় শাসকদল তৃণমুল। বিরোধীদের ধরাশায়ী করার কোনও প্ল্যান নেই। নির্বাচনী কৌশল ঠিক করা নিয়ে কোনও কর্মসূচি নেই। সরকারের জনমুখী প্রকল্পগুলিকে প্রচারের আলোকে আনার কোনও উদ্যোগ নেই। রয়েছে শুধু নেতাদের কোন্দলে জড়ানোর দীর্ঘমেয়াদী ‘পরিকল্পনা’! ফল যা হওয়ার তাই। নানা কারণে কিছুটা ঘায়েল থাকা বিজেপি তেড়েফুঁড়ে উঠতে শুরু করেছে।  

    স্রেফ গোষ্ঠী কোন্দলের কারণে ২০১৬ সাল থেকেই পুরুলিয়া কেন্দ্রে জয়ের মুখ দেখেনি তৃণমূল। আগামী বিধানসভা ভোটে সরাসরি হিন্দুত্বের তাস নিয়ে ময়দানে নামছে বিজেপি।  তাতে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোটকুশলীদের পরামর্শ, এখন থেকেই সবাই এক হয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা না করলে, এবারেও ভুগতে হবে তৃণমূলকে। 

    ২০১১ সালে জেলায় সব চেয়ে বেশি ২৫ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে পুরুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয় তৃণমূল। ২০১৫ সালের পুরভোটে পুরুলিয়া শহরের ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডেই জয়ী হয় তৃণমূল। যদিও ২০১৬  সালে  বিধনাসভা নির্বাচনের পর থেকেই ছবিটা বদলাতে থাকে। সে বছর কংগ্রেসের কাছে হারতে হয় তৃণমূলকে। তারপর থেকে শহরে উত্থান শুরু হয় বিজেপির। 

    ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরের কাছে ধরাশায়ী হতে হয়েছিল তৃণমূলকে। সে বার শহরের ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টি ওয়ার্ডেই এগিয়ে যায় বিজেপি। একুশের বিধানসভা ভোটেও শোচনীয় পরাজয় হয় তৃণমূলের। এই বিধানসভার গ্রামীণ এলাকায় তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও শহরের ভোটেই বাজিমাত করে বিজেপি। ২৩টি মধ্যে ১৮টিতেই এগিয়ে যায় বিজেপি। অথচ, বছর ঘুরতেই ছবিটা বদলে যায় ২০২২ সালের পুরভোটে। ২৩টি আসনের মধ্যে ১৭টি ওয়ার্ডে জয়ী হয় তৃণমূল। কিন্তু ফের ২০২৪-র লোকসভায় শহরের ভোটেই ভরাডুবি হয় তৃণমূল প্রার্থীর। পুর এলাকা থেকে প্রায় ২৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে যায় বিজেপি।শহরের ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মাত্র দু’টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, শহর সভাপতির ওয়ার্ডেও পিছিয়ে যায় তৃণমূল। অর্থাৎ, পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, ২০১০ সাল থেকে পুরুলিয়া পুরসভায় টানা ক্ষমতায় থাকলেও লোকসভা, বিধানসভার ভোটে শোচনীয় অবস্থা হয় দলের। প্রশ্ন উঠছে, পুরভোটে নিজেদের ভোটব্যাক্স ভরাতে যেভাবে সক্রিয় থাকেন কর্মীরা, অন্য বড় ভোটে কি ততটা হন না? এর পিছনে অনেকে তৃণমূলের জেলা নেতাদের কোন্দলকে দায়ী করছেন। জেলা নেতাদের মধ্যে কোন্দল রয়েছে বিস্তর। বিভিন্ন কাউন্সিলার বিভিন্ন জেলা নেতার অনুগামী। ফলে তাঁদের মধ্যেও মতানৈক্য চরমে। প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে দলের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব বন্টন—সবেতেই ‘লবিবাজি’ চলছে বলে অভিযোগ। এনিয়ে দলের শহর সভাপতি সভাপতি প্রদীপ ডাগা বলেন, ‘সবকিছু ভুলে এখন আমাদের এক হয়ে লড়তে হবে। কাউন্সিলাররা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন, ততই মঙ্গল। পুরপরিষেবা ঠিকমতো দিতে না পারার জন্য অনেক কাউন্সিলারের উপর থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।’ 

    প্রাক্তন শহর সভাপতি তথা কাউন্সিলার বিভাসরঞ্জন দাসের অবশ্য দাবি, ‘নিজের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ শহর সভাপতি। সেই কারণে কর্মীরা বসে গিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনেও দলের ভরাডুবি আটকানো যাবে না।’ জবাবে প্রদীপ বলেন, ‘আমি তো সরতে রাজি আছি এখনও! দলকে সেকথা জানিয়েছি।’
  • Link to this news (বর্তমান)