নিজস্ব প্রতিনিধি, কালীগঞ্জ: সাফল্যের সংজ্ঞা নতুন করে লিখে নজির গড়ল দেবগ্রামের বিশ্বভারতী ভৌমিক। পারিপার্শ্বিক সমস্যা হার মানল তার জেদের কাছে। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় ৬৫৭ নম্বর পেয়েছে সে। পিছনে ফেলে দিল পারিবারিক দুঃখ ও আর্থিক অনটনকে। কালীগঞ্জ ব্লকের দেবগ্রাম ডি কে গার্লস হাইস্কুলের এই কৃতী ছাত্রীর সাফল্যে খুশি সকলেই। ৯৩ শতাংশ নম্বর নিয়ে কালীগঞ্জ ব্লকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে সে। যদিও এই খুশির দিনেও মন খারাপ বিশ্বভারতীর। কারণ প্রত্যাশার ফলাফল হয়নি বলেই তিনি মনে করছেন। মাধ্যমিকে আরও ভালো ফল করার আশা ছিল তাঁর। বড় হয়ে ডেটা সায়েন্টিস্ট হতে চায় বিশ্বভারতী। কিন্তু আর্থিক অনটনের মধ্যে মেয়ের এই স্বপ্ন কীভাবে পূরণ করবেন, সেই নিয়েই চিন্তায় ঘুম উড়েছে মা শিবানী ভৌমিকের।
বিশ্বভারতী বলে, আমি আর একটু ভালো ফলাফল আশা করেছিলাম। পড়াশোনায় আমাকে অনেকে সাহায্য করেছেন। সকলের আশীর্বাদেই এই ফল হয়েছে।
বিশ্বভারতীর বয়স তখন মাত্র দু’বছর। সেই অল্প বয়সেই বাবাকে হারায় সে। বাড়িতে আরও দুই দিদি রয়েছে। বড়দির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মেজদিদি নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা করছে। মা দেবগ্রাম ডি কে গার্লস হাইস্কুলের চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী। ঘন্টা বাজানো, শিক্ষকদের চা দেওয়া সহ বিভিন্ন কাজ করেন। বেতনও যৎসামান্য। তাই পরিবারে নেই কোনও আর্থিক জাঁকজমক। কিন্তু আছে জেদ, অধ্যবসায়, আর মায়ের নিরন্তর উৎসাহ। ছোটবেলা থেকেই মায়ের হাত ধরে স্কুলে যেত বিশ্বভারতী। স্কুল ছুটির পর মায়ের কাজ শেষ হলে তারপর বাড়ি ফিরত সে। যার আর স্কুলই হয়ে ওঠে তার দ্বিতীয় পরিবার। মাধ্যমিকে এই সাফল্যে কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষকদেরও অবদান রয়েছে বলেই দাবি বিশ্বভারতী ও তার মায়ের। পড়াশোনায় বরাবরই মনোযোগী বিশ্বভারতীর লক্ষ্য ছিল বড় কিছু করার। মাধ্যমিক পরীক্ষায় তার ফলাফল চমকে দিয়েছে সকলকে। ভৌতবিজ্ঞান ৯৭, অঙ্ক ৯৫, ভূগোল ৯৬, ইংরেজি ৯৩, জীবনবিজ্ঞান ৯৩, ইতিহাস ৯১ ও বাংলায় ৯২ নম্বর। স্কুলের তরফ থেকে বই, নোটস, এমনকী মানসিক সমর্থনও দেওয়া হয়েছে নিয়মিত। গবেষণার জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চায় সে। তার এই অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং সাফল্য আজ অনেক ছাত্রছাত্রীর কাছে অনুপ্রেরণা। বিশ্বভারতীর মা বলেন, অনেক কষ্ট করে ওর পড়াশোনা করিয়েছি। আগামী দিনে কীভাবে চালব সেটাই চিন্তা। ওর স্কুলের শিক্ষকরা পড়াশোনাতে অনেক সাহায্য করেছেন। শুক্রবার রাতেই কালীগঞ্জে পঞ্চায়েত সমিতি, ব্লক প্রশাসনের আধিকারিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিশ্বভারতীকে সংবর্ধনা দিতে যান। আগামী দিনে পড়াশোনার জন্য তাকে সর্বত্রভাবে সাহায্য করা ও পাশে থাকার আশ্বাস দেন। -নিজস্ব চিত্র