নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: নদীয়া জেলায় উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে ছাত্রীদের স্কুলছুট হওয়ার ঘটনা। গত শিক্ষাবর্ষে জেলাজুড়ে প্রায় ১২ হাজার ছাত্রী স্কুলছুট হয়েছে বলে আশঙ্কা। সম্প্রতি কন্যাশ্রী পোর্টালের পরিসংখ্যান যাচাই করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এর আগে এক বছরে এত সংখ্যক ছাত্রী স্কুলছুট হয়নি। যদিও এই ১২ হাজার ছাত্রীর মধ্যেসবাই যে নিশ্চিত ভাবে স্কুলছুট তা বলতে পারছে না প্রশাসন। অনেকেই আছে যারা আদৌ স্কুলছুট কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত হয়ে পারেনি তারা। তবে সবমিলিয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষে সরকারিভাবে হদিশ পাওয়া যায়নি প্রায় ১২ হাজার ছাত্রীর। এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই মনে করছে প্রশাসনমহল। সেইমতো বিভিন্ন স্কুলে নিয়মিত সেমিনার করা হচ্ছে প্রশাসনের তরফ থেকে। সেখানে প্রশাসনের আধিকারিকরা সরাসরি ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন।
বাল্যবিবাহ এবং স্কুলছুট হওয়ার সমস্যা নদীয়াতে দীর্ঘদিনের। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় ক্রমেইবাড়ছে এই ব্যাধি। রাজ্য সরকার কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প এনেছে। গত বছর থেকে এই প্রকল্পের সঙ্গে ছাত্রীর আধার কার্ড যুক্ত করা হয়েছে। যাতে ছাত্রীদের স্কুলছুটের উপর আরও বেশি করে নজরদারি চালানো যায়। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যই হল, আর্থিক সমস্যায় ছাত্রীদের স্কুলছুট হওয়া রোখা। সেইমতো প্রশাসন নিয়ম করে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেয়। কিন্তু তারপরেও জেলায় এই বিপুল সংখ্যক ছাত্রীর স্কুলছুট হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে, জেলায় কয়েক হাজার স্কুলছাত্রী কন্যাশ্রী কে-১ প্রকল্পে রিনিউয়াল বা আপগ্রেডেশনের জন্য আবেদন করেনি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কন্যাশ্রী পোর্টাল অনুযায়ী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ‘নিশ্চিত’ স্কুলছুট ছাত্রীর সংখ্যা ৪ হাজার ৪২২। যার মধ্যে চাপড়া ব্লকে ১০০০-এর বেশি, কালীগঞ্জ ব্লকে ৮০০-এর বেশি, নাকাশিপাড়া ব্লকে ৪০০-র বেশি, করিমপুর-২ ব্লকে ৩০০-র বেশি এবং কৃষ্ণনগর-১ ব্লকে ৫০০-র বেশি স্কুলছুট ছাত্রী রয়েছে। যেখানে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে নদীয়া জেলায় স্কুলছুট ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ।
প্রশাসন সূত্রে আরওও জানা গিয়েছে, নদীয়া জেলাজুড়ে এমন প্রায় ৫ হাজার ৭১৮ জন ছাত্রীর হদিশ পাওয়া গিয়েছে, যারা সম্ভাব্য স্কুলছুট। কারণ তারা একটি স্কুল থেকে ট্রান্সফার নিয়েঅন্য কোনও স্কুলে নাম নথিভুক্ত করায়নি। তাই সেই সমস্ত ছাত্রীদের সম্ভাব্য স্কুলছুট হিসেবে ধরা হচ্ছে। পাশাপাশি নদীয়া জেলাজুড়ে ১৫৯২ ছাত্রী নানা সমস্যায় কন্যাশ্রী পোর্টালে নাম পুনরায় নথিভুক্ত করায়নি। তাই তাঁরা স্কুলছুট কিনা সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি প্রশাসন। উল্লেখ্য, সরকারি নিয়মানুযায়ী স্কুলের তরফ থেকে কন্যাশ্রী পোর্টাল একবার যদি কোনও ছাত্রীকে ‘স্কুলছুট’ হিসেবে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়, তাহলে সে তিন বছরের জন্য কন্যাশ্রীর টাকা পায়না।
প্রশাসন এক আধিকারিকের কথায়, ২০২৩ সাল পর্যন্ত কন্যাশ্রী পোর্টালে ছাত্রীদের নাম রিনিউয়ালের জন্য আধার লাগত না। যার ফলে তখন নদীয়া জেলার ১০০ শতাংশ রিনিউয়ালও হয়েছে। তবে গত বছর থেকে ছাত্রীদের নাম রিনিউয়ালের জন্য আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই পদ্ধতি চালু করায় ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে কন্যাশ্রী প্রকল্পে নদীয়া জেলায় ৯৮ শতাংশ রিনিউয়াল হয়েছে।