সংবাদদাতা, লালবাগ: মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বড় ধরনের মাদক চোরাচালানের চেষ্টা ব্যর্থ করল বিএসএফ। প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মাদক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তবে কেউ আটক বা গ্রেপ্তার হয়নি। বিএসএফ জওয়ানদের দেখে পাচারকারীরা পালিয়ে যায়। জওয়ানরা ঝোপঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে রাখা মেথাক্যালোন ও হেরোইন উদ্ধার করেন।
বিএসএফ সূত্রের খবর, রবিবার গভীর রাতে লালগোলার খান্দুয়া বিওপি’র ৭১নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা দু’জন চোরাচালানকারীকে সীমান্তের দিকে এগতে দেখেন। জওয়ানরা তাদের পিছু নেন। চোরাকারবারিরা বিষয়টি বুঝতে পেরে ছুটে আটরশিয়া গ্রামের দিকে পালিয়ে যায়। জওয়ানরা বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করেও তাদের হদিশ পাননি। তারপরই বিএসএফ জওয়ানরা সীমান্ত ও লাগোয়া এলাকায় অনুসন্ধান চালাতে থাকেন। বিভিন্ন ঝোপঝাড়ে তল্লাশি চালিয়ে জওয়ানরা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ উদ্ধার করেন। সেই ব্যাগের ভিতর ব্রাউন টেপে জড়ানো দু’টি প্যাকেট ছিল। প্রথম প্যাকেটে ১০টি ছোট প্যাকেটে হালকা হলুদ রংয়ের পাউডার ছিল। দ্বিতীয়টিতে দু’টি প্যাকেট ছিল। একটির ভিতর বাদামি পাউডার, অন্যটিতে হালকা হলুদ রংয়ের পাউডার দেখতে পান জওয়ানরা। বাজেয়াপ্ত সামগ্রী পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
সেই পরীক্ষায় জানা যায়, ওই ব্যাগে ১.০৬ কেজি মেথাক্যালোন ও ১০০গ্রাম হেরোইন ছিল। বাজেয়াপ্ত মাদকদ্রব্যের অপরাধজগতে মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। বিএসএফের তরফে বাজেয়াপ্ত মাদকদ্রব্য লালগোলা থানার পুলিসের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী লালগোলা একসময় হেরোইনের হাব হয়ে উঠেছিল। ভিনরাজ্য থেকে কাঁচামাল এনে হেরোইন তৈরি হতো। এই মাদকের ক্যারিয়ারের কাজে যুবকদের পাশাপাশি মহিলারাও হাত পাকাতে শুরু করেছিল। মাদক কারবারের এই রমরমা লালগোলা থানার পুলিস ও বিএসএফের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সীমান্তে মাদক কারবার ও চোরাচালানে রাশ টানতে বিএসএফ ও পুলিস যৌথ অভিযান শুরু করে। গত কয়েকবছরে যৌথ অভিযানে বহু মাদক কারবারি ও ক্যারিয়ার ধরা পড়েছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে। ফলে মাদক কারবারের রমরমা কমলেও তা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। সাধারণত শীত ও ভরা বর্ষায় মাদক কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু এবার অসময়ে মাদক কারবারের রমরমা বিএসএফ ও পুলিসের কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের জনসংযোগ আধিকারিক বলেন, মাদক কারবারের বিরুদ্ধে বিএসএফ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। এর সমস্ত কৃতিত্ব সাহসী জওয়ানদের প্রাপ্য, যাঁরা দিনরাত সজাগ থেকে চোরাচালানের চেষ্টা ব্যর্থ করেন। বিএসএফ জওয়ানদের সতর্কতা ও দ্রুত পদক্ষেপের কারণে চোরাচালানকারীদের মনোবল ক্রমশ ভেঙে যাচ্ছে।