• মাধ্যমিকে ৬৩৮, লালগোলায় পরিযায়ী শ্রমিকের ছেলের ডাক্তার হতে বাধা অর্থ
    বর্তমান | ০৬ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: বাবা পরিযায়ী শ্রমিক। বছরের অর্ধেক সময়ই বাড়িতে থাকেন না। চূড়ান্ত অর্থকষ্ট লেগেই থাকে পরিবারে। লালগোলার সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত গ্রামের সেই পরিবারের ছেলেই মাধ্যমিকে ৬৩৮ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সকলকে। লালগোলা লস্করপুর হাইস্কুলের ছাত্র মহম্মদ হেদায়তুল্লাহর একজনই মাত্র গৃহশিক্ষক ছিল। মূলত স্কুলের শিক্ষকদের সহায়তাতেই এই তাক লাগানো ফল তার। তিন ভাইবোনের মধ্যে হেদায়তুল্লাহ ছোট। তিনজনই মেধাবী। হেদায়তুল্লাহ স্বপ্ন দেখে ডাক্তার হওয়ার। তার জন্য নিট পরীক্ষা দিতে হবে। কিন্তু ভবিষ্যতে যার পড়াশোনা চালানোই দুষ্কর, তার এই স্বপ্ন বাস্তব হবে কী ভাবে! সেই চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে। 

    বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার জন্য তাকে অন্যত্র গিয়ে থাকতে হবে এবং টিউশন নিতে হবে। এই বিপুল খরচ জোগাবে কে। বাবার আয়েই সংসার চলে। এক দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে, অপর দিদি নেট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হেদায়াতুল্লাহর পরবর্তী পড়াশোনার জন্য তার শিক্ষক-শিক্ষিকারাও চিন্তিত। অর্থাভাবে মেধাবী পড়ুয়ার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে না তো! 

    উচ্চমাধ্যমিকে এখন বিজ্ঞানের যে সিলেবাস, তাতে ভালো শিক্ষক-শিক্ষিকা দরকার। লস্করপুর হাইস্কুল লালগোলার শেষ প্রান্তে। ভালো মাস্টারের কাছে পাঁচটি টিউশনি পড়তে হবে। যা এই গ্রামে পাওয়া মুশকিল। এখানে  বিজ্ঞানের ভালো শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। তাই অন্যত্র ভর্তি হতে হবে। হেদায়াতুল্লাহ চেষ্টা করছে কলকাতায় পড়তে যেতে। না হলে তার স্বপ্নপূরণ হবে না। 

    হেদায়াতুল্লাহ বলে, পরবর্তীতে নিট দিয়ে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা আছে। ছোটবেলা থেকে মানুষের সেবা করার স্বপ্ন দেখি। পারিবারিক অবস্থা যা, তাতে স্কলারশিপের টাকা ছাড়া পড়াশোনা করা সম্ভব না। আমি কলকাতায় পড়তে যেতে চাই। জানি না, তা সম্ভব হবে কি না। 

    লস্করপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গির আলম বলেন, সবাইকে বলছি বহরমপুর গিয়ে পড়াশোনা করতে। এই ব্লকে থেকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা চালানো খুবই কঠিন। যে সমস্ত দুঃস্থ ছেলেমেয়ে আমাদের বিদ্যালয়ে র‍্যাঙ্ক করেছে তাদের আর্থিক সাহায্য করতে হবে। কিছু লোকজনকে বলছি যদি ওদের হাতে কিছু টাকা তুলে দেওয়া যায়, তাহলে পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পারবে। হেদায়াতুল্লাহ খুব ভালো ছাত্র। ওর দিদি এবং ও দুজনেই বরাবর ভালো রেজাল্ট করত। ওর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নটা যাতে সত্যি করা যায়, তার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। 
  • Link to this news (বর্তমান)