• গ্রামবাসীদের থেকে ৪০ লক্ষ টাকা তুলে উধাও পোস্টমাস্টার
    বর্তমান | ০৬ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: রামনগর-১ ব্লকের অশ্বত্থপুর পোস্ট অফিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট পোস্টমাস্টার শান্তনু পড়িয়া ২০২৩সাল থেকে নিখোঁজ। দু’বছর ধরে অফিসে যাচ্ছেন না। স্থানীয় অশ্বত্থপুর ও রানিসাই গ্রামের বহু গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৪০লক্ষ টাকা তুলে পোস্টঅফিসে জমা দেননি বলে অভিযোগ। দু’বছর আগে বিষয়টি জানাজানি হতেই প্রতারিত গ্রাহকরা দলবেঁধে তাঁর বাড়িতে গিয়ে চড়াও হন। শারীরিক হেনস্তাও করা হয়। তারপর থে঩কেই বেপাত্তা ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট পোস্টমাস্টার। টানা দু’বছর নিখোঁজ থাকার ব্যাপারে ডাক বিভাগের কাঁথি-১ সাব ডিভিশনের ইন্সপেক্টর রিপোর্ট পেশ করেন। তার ভিত্তিতে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। আগামী ৮মে অভিযুক্ত শান্তনুকে তদন্তকারী বোর্ডের সামনে হাজির হতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে পোস্টাল বিভাগ। ঘটনায় এলাকায় হইচই পড়ে গিয়েছে।

    পোস্টাল বিভাগের কাঁথি ডিভিশনের সুপার ভাগ্যধর দাস বলেন, অশ্বত্থপুর পোস্ট অফিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট পোস্টমাস্টার দু’বছর ধরে অফিসে যাচ্ছেন না। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। ৮তারিখ এনকোয়ারি বোর্ড তলব করেছে।

    শান্তনুবাবুর বাড়ি অশ্বত্থপুর গ্রামেই। তাঁর বাবা মণীন্দ্রনাথ পড়িয়া গ্রামেরই পোস্ট অফিসের কর্মী ছিলেন। কর্মরত অবস্থায় তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ছেলে শান্তনু ২০২১সালে অ্যাসিস্ট্যান্ট পোস্টমাস্টার হিসেবে চাকরি পান। গ্রামেরই ছেলেকে ভরসা করে অনেকেই পোস্ট অফিসে টাকা জমা দেওয়ার জন্য পাসবই ও নগদ টাকা তুলে দিয়েছিলেন। গ্রামের বাসিন্দা পারুল বারিক ৫০হাজার টাকা, পুতুল বারিক ৩০হাজার টাকা, রানিসাই গ্রামের রোকেয়া বিবি ৮২হাজার টাকা, নূপুর দাস এক লক্ষ টাকা জমা দেওয়ার জন্য শান্তনুর হাতে দিয়েছিলেন। কখনও লিঙ্ক নেই, আবার কখনও সার্ভারে সমস্যা সহ নানা অজুহাতে সেইসব নগদ জমা না করে নিজে কব্জা করেছেন বলে অভিযোগ। রানিসাই গ্রামের একটি পরিবার ১১লক্ষ টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছে বলে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের দাবি।

    পোস্ট অফিসে শান্তনুবাবুর টাকা জমা না দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হতেই রামনগরের হলদিয়া-২ পঞ্চায়েতের অশ্বত্থপুর ও রানিসাই গ্রামের প্রতারিত গ্রাহকরা বাড়িতে চড়াও হন। ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট পোস্টমাস্টারকে হেনস্তা করা হয়। তারপর বাড়ি ছেড়ে বেপাত্তা ওই যুবক। টানা দু’বছর নিজের কর্মস্থলে যাননি। এই অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে বোর্ড গঠন করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। সেই বোর্ড আগামী ৮মে বেলা ১২টায় শান্তনুকে দপ্তরের কাঁথি-১ সাব ডিভিশন অফিসে তলব করেছে। ওইদিন হাজির না হলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।

    অশ্বত্থপুর গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য রমাকান্ত সাউ বলেন, গ্রামের লোকজন ভরসা করে শান্তনুর হাতে টাকা দিয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা জমা না করে নিজে আত্মসাত করেছেন। টাকার অঙ্ক প্রায় ৪০লক্ষ। এনিয়ে তাঁর বাড়ি ঘেরাও হয়েছিল। তখন থেকেই তিনি বেপাত্তা। রানিসাই গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য শেখ জুলফুকার বলেন, এই গ্রাম থেকেই সবচেয়ে বেশি টাকা তোলা হয়েছে। কর্ম সূত্রে জাপানে থাকা এক যুবক তাঁর বোনের বিয়ের জন্য টাকা জমা করছিলেন। ওই যুবকের মা ১১লক্ষ টাকা শান্তনুর হাতে তুলে দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। আরও একজন তিন লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। প্রতারিত হওয়া টাকার অঙ্ক ৪০-৫০লক্ষ হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)