সংবাদদাতা, রামপুরহাট: অ্যাসিড বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে, অ্যাসিড বিক্রি করতে হলে একটি লাইসেন্স প্রয়োজন এবং দোকানগুলিকে তাদের অ্যাসিডের স্টক এবং বিক্রয়ের একটি রেজিস্টার রাখতে হয়। ক্রেতাকে আইডি প্রমাণ দেখাতে হয় এবং অ্যাসিড কেনার কারণ সহ সব তথ্য রাখতে হবে। অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ রয়ে গিয়েছে খাতায় কলমে। অবশ্য সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেদার বিক্রি হচ্ছে অ্যাসিড। তাতে অ্যাসিড হামলাও সহজ হয়ে পড়ছে।
রামপুরহাট মহকুমায় ক্রমশ অ্যাসিড হামলার ঘটনা বাড়ছে। কয়েকমাস আগে নলহাটিতে প্রেমে প্রত্যাখ্যান হয়ে প্রকাশ্য রাস্তার উপর প্রেমিকার উপর অ্যাসিড হামলা চালায় প্রেমিক। কিছুদিন আগে তারাপীঠে এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীর গায়ে ও মুখে অ্যাসিড ছোড়ার অভিযোগ ওঠে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। তার কিছুদিন পর রামপুরহাটে সম্পর্কের টানাপোড়ন জেরে জানালা দিয়ে ঘুমন্ত যুবতীর উপর অ্যাসিড ছোড়ে এক যুবক। গত মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় নলহাটিতে এক পরীক্ষার্থীর হাতে অ্যাসিড দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সহপাঠী নাবালকের বিরুদ্ধে। গত বছরের অক্টোবরে মাড়গ্রামে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীর উপর অ্যাসিড হামলা চালায় স্বামী। বধূ ছাড়াও জখম হন দুই শিশু সন্তান। গত ৩১ মার্চ বিয়েতে রাজি না হওয়ায় নাবালিকা প্রেমিকার মুখে অ্যাসিড ছোড়ে প্রেমিক। রবিবার সন্ধ্যায় অভিযোগ জানাতে এসে খোদ রামপুরহাট থানা চত্বরে অ্যাসিড আক্রান্ত হন বছর তেইশের বধূ। অভিযোগ পেয়ে বধূর প্রথম পক্ষের স্বামী রকি শেখ, প্রাক্তন দেওর লাকি শেখ ও তাদের বাবা মিলন শেখকে গ্রেপ্তার করে। সোমবার রামপুরহাট আদালতে তোলা হলে বিচারক লাকিকে পুলিস ও বাকি দু’জনকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
এদিকে কী করে অ্যাসিড এত সহজলভ্য হয়ে পড়ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণত দোকানে যে অ্যাসিড বিক্রি হয়, সে তো ব্যবহার হয় মূলত শৌচাগার পরিষ্কারের কাজে। আর যে অ্যাসিড নিয়ে হামলা চালানো হয়, তা মিউরিটিক বা নাইট্রিক অ্যাসিড, যা সাধারণত ব্যবহার করা হয় সোনার দোকানে। ওই অ্যাসিড সাধারণ মানুষের হাতে যায় কীভাবে? অনেকেই বলছেন, এক সময়ে পুলিসের নজরদারি চলত। মানা হত রেজিস্টারও। ইদানীং সে সব হয় না। সোনার কাজে ব্যবহৃত অ্যাসিড এখানে সহজলভ্য।
তবে শুধু নজরদারি বা সচেতনতা প্রচারে অ্যাসিড হামলা বন্ধ সম্ভব নয়, বলছেন আক্রান্তেরা। তাঁদের বড় অংশের দাবি, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় হামলাকারীদের সাহস বেড়ে যাচ্ছে। হামলাকারীদের আটকানো যাচ্ছে না, প্রশাসনেরও এব্যাপারে কোনও সদিচ্ছা নেই। যদিও নলহাটির এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ কর্মকার বলেন, বহরমপুর, রানিগঞ্জের ডিস্ট্রিবিউটরের ঘর থেকে আইডি প্রুফ জমা দিয়ে অ্যাসিড নিয়ে আসি। আমরা লুজ কাউকে বিক্রি করি না। তবে অনেকে দাঁতের ব্যথা কমানোর অ্যাসিড নিতে আসেন। পরিচিত হলে জল মিশিয়ে হয়তো একটুখানি কেউ দেয়। তবে এখন তো ওষুধের দোকানেও কার্বলিক অ্যাসিড বিক্রি হচ্ছে।
যদিও এব্যাপারে রামপুরহাট মহকুমা শাসক সৌরভ পান্ডে বলেন, খুব শীঘ্রই অভিযানে নামা হবে। দেখা হবে, অ্যাসিড কেনাবেচার ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হচ্ছে কী না।