নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হয়ে উঠেছিল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের আঙুলের ছাপ। ঘটনাস্থল থেকে বাজেয়াপ্ত সামগ্রী থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে অভিযুক্তের আঙুলের ছাপ। বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায় তার সঙ্গে মিলে যায় ধৃত সঞ্জয়ের ফিঙ্গারপ্রিন্ট।
এভাবে আঙুলের ছাপের সাহায্যে অপরাধী শনাক্ত করতে আরও উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে এল সেন্ট্রাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরো। এই বিশেষ ব্যবস্থার নাম ‘মর্ফো বায়োমেট্রিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম’ বা এমবিআইএস। আগে কোনও ক্রাইম সিন বা অপরাধস্থল থেকে একাধিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া গেলে তা আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হতো না। এবার সেই চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া হবে এক নিমেষে। শুধু তাই নয়, মসৃণ বা অমসৃণ, যেকোনও ধরনের পৃষ্ঠতলেই এই প্রযুক্তি কাজ করতে সক্ষম। সম্প্রতি এনিয়ে লাগাতার প্রশিক্ষণ চালাচ্ছেন সেন্ট্রাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরোর আধিকারিকরা। দিল্লি, কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন বড় শহর মিলিয়ে মোট ১০০ জন পুলিসকর্মীকে এই বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছে ব্যুরো। এই প্রযুক্তির কী কী বৈশিষ্ট্য, কীভাবে অকুস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হবে—এসবই শেখানো হচ্ছে হাতেকলমে। অপরাধী চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে তদন্তকারীদের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ‘লিড’ দিতে পারে এই ‘মর্ফো বায়োমেট্রিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম’। তদন্তে গতি আনতে দেশজুড়ে এই বিশেষ ব্যবস্থা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এমবিআইএস একটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি। ঘটনাস্থল থেকে বাজেয়াপ্ত সামগ্রী বা নমুনাতে আঙুল (ফিঙ্গার) ও তালুর (পাম) ছাপ একই ব্যক্তির কি না, তা সহজেই চিহ্নিত করতে পারে এই প্রযুক্তি। পৃথক ব্যক্তির হলে তাও জানিয়ে দেবে। এই ফলাফল থেকে বোঝা যাবে, অপরাধের সময় বা পরবর্তী ক্ষেত্রে তথ্যপ্রমাণ লোপাটে এক নাকি একাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিল। প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত আগে কখনও গ্রেপ্তার হয়ে থাকলে তার ছবি, ঠিকানা, আঙুলের ছাপ, ফোন নম্বর সহ যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকে পুলিসের তথ্যভাণ্ডারে। এই ধরনের অপরাধীকে পুলিসি পরিভাষায় বলে ‘হ্যাবিচুয়াল অফেন্ডার’। তাই অপরাধ ঘটানোর ক্ষেত্রে ‘হ্যাবিচুয়াল অফেন্ডার’ যুক্ত থাকলে বিশেষ সুবিধা পাবেন তদন্তকারীরা। অকুস্থল থেকে পাওয়া ফিঙ্গারপ্রিন্টের নমুনা ল্যাবে দিলেই এক ক্লিকে কম্পিউটার বলে দেবে, অভিযুক্তের ঠিকুজি-কুষ্ঠি। তদন্তকারীরা বলছেন, আগে একই জায়গায় একাধিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট অথবা তালুর প্রিন্ট থাকলে, তা আলাদা করা সম্ভব হতো না। তাই ঘটনাস্থলের তথ্যপ্রমাণ ঘেঁটে দেওয়া ছিল সহজ। নতুন এই আধুনিক ব্যবস্থায় ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট ওভারল্যাপ’ হলে তাও চিহ্নিত করা যাবে।