এই সময়: প্রশ্ন একটাই, ‘কবে?’
হাওড়া ময়দান থেকে সরাসরি মেট্রোয় শিয়ালদহ পেরিয়ে সল্টলেক সেক্ট–ফাইভ— খুব বেশি হলে সময় লাগার কথা ২৫ মিনিট। কিন্তু ওই ২৫ মিনিটের সুবিধা পাওয়ার জন্য কত দিন অপেক্ষা করতে হবে যাত্রীদের? কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি–র (সিআরএস) থেকে অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে গ্রিন লাইনে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে পরিষেবা দেওয়ার। কিন্তু এখনও গ্রিন লাইনকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়নি ভারতীয় রেল বোর্ড। কবে পাওয়া যাবে সেই সিগন্যাল? প্রতীক্ষা তারই।
কলকাতা মেট্রোরেলের অপারেশন–এর সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের একাংশ বলছেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী সিআরএস–এর সার্টিফিকেট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেল বা মেট্রোর কোনও প্রজেক্ট বাণিজ্যিক ভাবে যাত্রী পরিবহণের অধিকারী। সেই শর্ত অনুযায়ী কলকাতার মেট্রোর গ্রিন লাইনও হাওড়া ময়দান থেকে সরাসরি সল্টলেক সেক্টর–ফাইভ পর্যন্ত অংশে যাত্রীদের নিয়ে রেক চালাতে পারে।’
কিন্তু ‘আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের’ জন্য দরকার রেলবোর্ডের সবুজ সংকেত। এই প্রসঙ্গে কলকাতা মেট্রোর আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, সিআরএস–এর অনুমোদন কার্যকরী থাকে তিন মাস। অর্থাৎ তিন মাসের মধ্যে সেই লাইনে যাত্রী পরিবহণ শুরু না–হলে ফের সিআরএস–কে ডেকে অনুমোদন নিতে হয়। অরেঞ্জ লাইনের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছিল। সূত্রের খবর, নিউ গড়িয়া থেকে রুবি পর্যন্ত অংশের উদ্বোধনের কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। কিন্তু সিআরএস অনুমোদন পাওয়ার তিন মাস পরেও প্রধানমন্ত্রী সময় দিতে না–পারায় সেই অনুমোদনের সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। নতুন করে অনুমোদন নিতে হয়।
গ্রিন লাইনের ক্ষেত্রে অবশ্য উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর হাতেই হয়েছিল। তবে এসপ্ল্যানেড থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মাত্র ২.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশে ট্রেন চালানো যায়নি পর পর ধসের কারণে। প্রায় ছ’বছরের চেষ্টায় সেই সুড়ঙ্গকে মেট্রোর রেক চালানোর উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে। গ্রিন লাইনের নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবাটিও কি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায়? এই প্রসঙ্গে কলকাতা মেট্রোর তরফে অবশ্য কোনও মন্তব্য করা হয়নি। শুধু জানানো হয়েছে, ‘রেলবোর্ড অনুমতি দিলেই পরিষেবা চালু হবে।’ তা হলে কবে পাওয়া যাবে অনুমতি?
কলকাতা মেট্রো রেলের কর্মীদের সংগঠন মেট্রোরেল মেনস ইউনিয়নের (এমআরএমইউ) সদস্যরা মনে করেন, গত কয়েক বছরে গোটা দেশে মেট্রোরেলের প্রায় প্রতিটা উদ্বোধনই করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। কলকাতায় গ্রিন লাইনের এই অংশ বাদ দিলেও ইয়েলো লাইনের নোয়াপাড়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত অংশটিরও সিআরএস অনুমোদন রয়েছে।
কাজেই প্রধানমন্ত্রীর একসঙ্গে জোড়া উদ্বোধনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু পহেলগামে জঙ্গিহানার পরে এই মুহূর্তে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে প্রধানমন্ত্রী আদৌ উদ্বোধনের জন্য সময় দিতে পারবেন কি না সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে।
১৯৮৪ সালে কলকাতা মেট্রোর উদ্বোধনের সাক্ষী যে কর্মীরা, তাঁরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ১৯৭২–এ দেশের প্রথম মেট্রোরেলের শিলান্যাস হয়েছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হাতে। কিন্তু উদ্বোধন করতে তিনি আসেননি। কিন্তু এখন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ছাড়া কিছুই হয় না। তাই সব কিছু তৈরি থাকার পরেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় গ্রিন লাইন — কয়েক লক্ষ যাত্রীও।