শ্রীকান্ত ঠাকুর: দক্ষিণ দিনাজপুরের(Dakshin Dinajpur) হরিরামপুর থানার মেহেন্দিপাড়া এলাকার মিশন মোড়ে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ও নারকীয় ঘটনা। বোনের সম্ভ্রম রক্ষার্থে আততায়ীর হাতে প্রাণ হারাল ভাই। সোমবার রাতে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে স্বর্ণলতা সরেনের বাড়িতে। এই ঘটনার জেরে গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
পুলিস সূত্রে খবর, মৃত ভাইয়ের নাম জিমেন টুডু। স্বর্ণলতা সরেনের ঘরে রাতের খাবার খাওয়ার পর তিনি শুতে যাচ্ছিলেন। ঘরে ঢুকে আলো জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর নজরে পড়ে খাটের নিচে কেউ লুকিয়ে রয়েছে। আতঙ্কিত স্বর্ণলতা সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে ভাই জিমেন টুডুকে ডাকেন।
জিমেন তৎক্ষণাৎ বোনের ঘরে এসে খাটের নিচ থেকে ওই ব্যক্তিকে টেনে বের করে আনতেই আততায়ী আচমকাই স্বর্ণলতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। তাকে বাঁচাতে আসেন ভাই জিমেন। তখনই আততায়ী হেমন্ত মুর্মু জিমেনের গলায় ছুরি চালিয়ে দেয়। আহত অবস্থাতেই হেমন্ত মুর্মু ছুটে যান মিশন মোড়ে একটি ওষুধের দোকানে এবং দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতে বলেন কিন্তু ওইখানেই কিছুক্ষণের মধ্যেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে মৃত্যু হয় তার। পরে হরিরামপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং তদন্ত শুরু করে। অভিযুক্ত হেমন্ত মুর্মুর বাড়ি মালদহ(Malda) জেলার বুলবুলচণ্ডী এলাকার কানতুরকা গ্রামে।
প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, প্রায় তিন মাস আগে স্বর্ণলতা সরেনের সঙ্গে হেমন্ত মুর্মুর পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই স্বর্ণলতা জানতে পারেন, হেমন্ত বিবাহিত এবং তাঁর পরিবার ও সন্তান রয়েছে। এরপরই তিনি ওই সম্পর্কে ইতি টানতে চান। কিন্তু হেমন্ত তা মেনে নিতে পারেনি।
রবিবার রাতেই হেমন্ত চুপিসারে মেহেন্দিপাড়ার স্বর্ণলতার বাড়িতে চলে আসে। বাড়ির সবার অলক্ষ্যে সে স্বর্ণলতার ঘরে ঢুকে খাটের নিচে লুকিয়ে পড়ে। স্বর্ণলতা ঘুমাতে যাওয়ার সময় লাইট জ্বালিয়ে খাটের নিচে কাউকে দেখতে পান এবং চিৎকার করে ভাইকে ডাকেন। তারপরই ঘটে মর্মান্তিক এই ঘটনা। স্বর্ণলতা এখন গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন। অভিযুক্ত হেমন্ত মুর্মুকে গ্রেফতারের জন্য পুলিস তৎপর হয়েছে এবং তাকে খুঁজে পেতে পুলিস চেষ্টা করছে। এই ঘটনার পর এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই ঘটনার উপযুক্ত বিচার এবং দোষীর কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। হেমন্ত মুর্মুর বিরুদ্ধে খুন ও হামলার ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্ত চলছে এবং শীঘ্রই তাকে গ্রেফতার করে আদালতের মুখোমুখি করা হবে বলে পুলিস আশ্বস্ত করেছে।