বট-পাকুড়ের বিয়ে ঘিরে উৎসবে ভাসল রায়গঞ্জের ছত্রপুর, আমন্ত্রিত চার শতাধিক
বর্তমান | ০৭ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ: বট-পাকুড়ের বিয়ে ঘিরে উৎসবে ভাসল রায়গঞ্জ শহর লাগোয়া ছত্রপুর এলাকা। একইসঙ্গে বেড়ে ওঠা দুই বৃক্ষের শুভ পরিণয় উপলক্ষ্যে আমন্ত্রিত ছিলেন চার শতাধিক গ্রামবাসী। এলাকাবাসীর মূল বার্তা, গাছ বাঁচানোর। সেজন্য ধুমধাম করে এই বিয়ের আয়োজন।
বিগত কয়েকদিন প্রস্তুতির পর মঙ্গলবার কমলাবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন ছত্রপুর এলাকায় রীতিমতো প্যান্ডেল তৈরি করে বসে বিয়ের আসর। আর পাঁচটি বিয়ের মতোই সমস্ত রীতিনীতি মেনে দুই বৃক্ষের বিয়ে দেওয়া হয়। সকাল থেকে বর রূপে শিব অর্থাৎ বট গাছ ও কনে রূপে পার্বতী অর্থাৎ পাকুড় গাছকে ঘিরে বিয়ের নানা উপাচার পালিত হয়। গায়ে হলুদ থেকে কোনও আচার বাদ যায়নি কিছুই। ছিল বরের টোপর, ধুতি, কনের বেনারসি শাড়ি সহ অন্যান্য পোশাক পরিচ্ছদ। গাছতলা সেজে ওঠে রঙিন আলোয়, ফুলের মালায়। বর ও কনেপক্ষের তরফে আয়োজন হয় পৃথক ব্যান্ড পার্টিরও। বিয়ে চলাকালীন গ্রামের মহিলারা নেচে, গেয়ে, বাজি ফাটিয়ে প্রবল উৎসাহ, উদ্দীপনার সঙ্গে বিয়ে উপভোগ করেন। কার্পণ্য ছিল না প্রীতিভোজেরও। পাত পেড়ে বসে খাওয়ার জন্য মেনুতে ছিল খিচুড়ি, সব্জি, রসগোল্লা, লাড্ডু। বিয়ের উপাচার পালনকারী ভক্তদের মধ্যে নিরোদ চন্দ্র বর্মন, অজয় ঘোষ, সঞ্জীব ঘটক, মণি দত্ত, পৌলমী দত্তরা বলেন, মানুষ বিভিন্ন মনোবাসনা নিয়ে বট পাকুড়ের বিয়ের আয়োজন করে থাকে। তবে এখানে গাছ রক্ষার মতো বার্তাই মূল বিষয় ছিল। গ্রামের কিছু অংশ ছিল বর পক্ষের তরফে। কিছু অংশ ছিল কনেপক্ষের তরফে। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই এই আয়োজন। তবে জগন্নাথ দেব মন্দির কমিটি ও গ্রামবাসীদের সহযোগিতাতেই গোটা আয়োজন।
এব্যাপারে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপক কুমার রায় বলেন, উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতির মধ্যেই এধরনের বৃক্ষ উপাসনার চল রয়েছে। বট ও পাকুড় শিব পার্বতী রূপেও পুজিত হন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মনোস্কামনা নিয়ে এধরনের বৃক্ষ পুজো হয়। সন্তান কামনাতেও এধরনের প্রকৃতির পুজোর চল দীর্ঘদিনের। রাজবংশী, আদিবাসী সমাজেও এই পুজোর চল রয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, বট পাকুড়ের বিয়ের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণেরও বার্তা। বট একটা এমন গাছ যে প্রকৃতিকে সবচাইতে বেশি রক্ষা করে থাকে। দূষণ কমানোর ক্ষমতা সব ধরনের গাছের চেয়ে এই গাছের বেশি। একটা পূর্ণ বয়স্ক বট গাছ সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন দিয়ে থাকে।