• অভাবকে হারিয়ে মেধার জয়, দুর্দান্ত ফল সামিউলের
    বর্তমান | ০৭ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: বাড়িতে নিত্য অভাব। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করে কোনওরকম সংসার চালান। সেই পরিবারের ছেলে সামিউল আনসারি এবছর মাধ্যমিকে অভূতপূর্ব রেজাল্ট করে রঘুনাথপুর এলাকায় তাক লাগিয়েছে। সামিউল রঘুনাথপুর ১ নম্বর ব্লকের শাখা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। সেই ছাত্র ৬৫১ নম্বর পেয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। চোখের সামনে অভাবকে দেখে জীবন সম্পর্কে বুঝেছে। কত গরিব মানুষ চিকিৎসার অভাবে চোখের সামনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে সামিউল। তাঁর স্বপ্ন যাতে সফল হয় সেজন্য গ্রামবাসীরা পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে। সামিউলের রেজাল্টে গ্রামবাসীরা খুশি।

     স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রঘুনাথপুর-১ নম্বর ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম গোপীনাথপুরে সামিউলদের বাড়ি। পরিবারে মা, বাবা, বোন রয়েছে। বাবার কষ্ট দেখে ছাত্র সামিউল পড়াশোনাকে জীবনের মূল লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। গ্রাম থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে শাখা উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিদিন বন্ধুদের সঙ্গে সাইকেলে করে বিদ্যালয় যাওয়া। আর্থিক অনটন ও দূরে বিদ্যালয় হলেও কখনও আক্ষেপ করেনি। পড়াশোনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে সেটাকে লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়েছে।

    জানা গিয়েছে, ছোট থেকে সামিউল পড়াশোনায় ভালো ছিল। পরিবার চাইতো ছেলে ভালো করে পড়াশোনা করুক। কিন্তু অর্থের অভাবে টিউশন পর্যন্ত দিতে পারেননি। কয়েকজন শিক্ষক তাঁর পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে তাঁকে সহায়তা করতেন। আর তাতেই সফলতা এসেছে। সে বাংলা ও ইতিহাসে ৯৪, ইংরেজিতে ৮৫, গণিতে ৯৯, ভৌত বিজ্ঞানে ৯০, জীবন বিজ্ঞানে ৯৩ এবং ভূগোলে ৯৬ পেয়েছে। আর্থিক অনটনের জন্য আগামীদিন আল-আমিন মিশনে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চাইছে সামিউল।

    সে বলে, নিজের রুটিন বানিয়ে রোজ ছয় ঘন্টা সময় করে পড়তাম। পাঠ্যবইকে বেশি গুরুত্ব দিতাম। পাঠ্যবই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তাম। এক বছর মোবাইল থেকে দূরে ছিলাম। ভালো রেজাল্ট করতে হবে সেটাই লক্ষ্য ছিল। বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করে কোনওরকম সংসার চালান। কষ্ট কি জিনিস তা চোখের সামনে দেখতে পাই। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। আগামীদিনে চিকিৎসক হয়ে গ্রাম বাংলার মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।

    ছাত্রের বাবা রহিম আনসারি বলেন, রাজমিস্ত্রির কাজ করে কোনওরকমে দিন যাপন করি। আগে প্রায় প্রতিদিনই কাজ মিলতো। তবে করোনার পর থেকে কাজে অনেকটা ভাটা পড়েছে। এখন মাসে ১৫ থেকে ২০ দিন কাজ হয়। ছেলে রেজাল্টের পর চিন্তায় পড়ে গিয়েছি। ছেলের স্বপ্ন রয়েছে চিকিৎসক হওয়ার। জানিনা স্বপ্ন কতটা সফল করতে পারব। তাই ছেলেকে আল আমিন মিশনে ভর্তি করতে চাই। কারণ ওখানে সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের কম খরচে পড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে।

    গ্রামের বাসিন্দা তথা তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি সাদ্দাম আনসারি বলেন, সামিউলের পাশে সমস্ত গ্রাম রয়েছে। দলীয়ভাবে তাকে যতটা পারি সাহায্য করবো। সামিউলের স্বপ্ন সফল করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)