সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: পাশেই রয়েছে নবদ্বীপ ব্লকের মহেশগঞ্জ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। তার পাশের দেওয়ালে লেখা ‘গাছ লাগান, গাছ বাঁচান।’ আর সেখান থেকে শুরু করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সহ গোটা চত্বর ছেয়ে গিয়েছে বিষাক্ত পার্থেনিয়াম গাছে। নবদ্বীপ ব্লকের মহেশগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালের ছবিটা ঠিক এমনই। সব মিলিয়ে বর্ষার আগে হাসপাতালের চারদিকে জঙ্গলের বাড়বাড়ন্ত। জঙ্গল বেড়ে যাওয়ায় সন্ধ্যার পর বাড়ছে মশার উপদ্রব। সর্বত্র ডেঙ্গু থেকে সচেতন থাকতে সরকারের তরফে বিভিন্নভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে। ঠিক তখনই এই বিপরীত চিত্র দেখা গেল নবদ্বীপ ব্লকের মহেশগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা ও রোগীর পরিবারের অভিযোগ, বন-জঙ্গলে বৃষ্টির জল জমছে। তাতে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। এর ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী ও তাঁর পরিবার অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। প্রসূতি মা থেকে শুরু করে ছোট শিশুরাও চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে আসেন। শুধু জঙ্গল নয়, অভিযোগ উঠছে হাসপাতালের চরম অব্যবস্থা নিয়েও। আউটডোরে চিকিৎসা, ওষুধ পরিষেবা, কিংবা জরুরি বিভাগে নার্সিং স্টাফদের দুর্ব্যবহার, সবকিছুই প্রশ্নের মুখে। এমনকী, নির্দিষ্ট সময়ে আউটডোর এবং ফার্মেসি বিভাগও খোলা হয় না।
আরও অভিযোগ, হাসপাতালে রোগীর পরিবারের জন্য কোনও শৌচাগার নেই। ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পে নবদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির তরফে হাসপাতাল সীমানায় পে অ্যান্ড ইউজ স্যানিটারি কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেটিও দীর্ঘদিন ধরে তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। হাসপাতালের ভিতরে থাকা হাইমাস্ট বাতিটিও প্রায় দু’বছর ধরে অকেজো।
মাজদিয়া-পানশিলা, স্বরূপগঞ্জ, চরমাজদিয়া-চরব্রহ্মনগর এবং মায়াপুর-বামুনপুকুর-১ ও ২নম্বর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা নবদ্বীপ ব্লকের মহেশগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। পার্শ্ববর্তী কোতোয়ালি থানার রুইপুকুর পঞ্চায়েতের বহু মানুষও চিকিৎসার প্রয়োজনে এখানেই আসেন। প্রতিদিনই এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল কয়েকশো মানুষ। ৩০টি শয্যাবিশিষ্ট নবদ্বীপ ব্লকের এই মহেশগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতাল। প্রসূতি বিভাগের পাশাপাশি প্রতিদিনই আউটডোর পরিষেবা চালু থাকে।
মহেশগঞ্জ হাসপাতাল বাজারের বাসিন্দা শ্যামল দেবনাথ বলেন, এখানে খুবই সাধারণ চিকিৎসা হয়। মাথা ফেটে গেলে বা ডায়ারিয়া হলেই কৃষ্ণনগরে রেফার করা হয়। তাছাড়া, রোগীর পরিবার কোনও বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলেই অসন্তোষ দেখান হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সরা। ডাক্তারবাবুদের ফোন করে ডেকে আনতে হয়। হাসপাতাল চত্বরজুড়ে প্রচুর পরিমাণে পার্থেনিয়াম গাছ রয়েছে। এই গাছ থেকে অ্যালার্জি, হাঁপানি, শ্বাসকষ্টের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। মহেশগঞ্জের বাসিন্দা কৌশিক দাস বলেন, হাসপাতালের চারিদিক জঙ্গল ও আবর্জনায় ভরে গিয়েছে। সেগুলি বর্ষার আগে পরিষ্কার করা দরকার।
ব্লকের এক আধিকারিক জানালেন, অবিলম্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাছগুলি কেটে গোটা চত্বর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে। -নিজস্ব চিত্র