• অভাবকে হারিয়ে মাধ্যমিকে সফল শালবনীর আকাশ
    বর্তমান | ০৭ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শালবনী: হাতির উপদ্রব লেগেই থাকে। খাবারের সন্ধানে গ্রামের ভিতরেও ঢুকে আসে হাতির দল। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন গ্রামের আট থেকে আশি সকলেই। তার উপর সংসারে অভাবের তাড়না তো রয়েছেই। অভাব থাকায় ভাত-মুড়ি খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়েছে। একদিকে হাতির আতঙ্ক, অপরদিকে অভাব। প্রতিবন্ধকতাকে তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্য পেল শালবনী থানার দহ গ্রামের বাসিন্দা আকাশ দাস। নয়াগ্রাম হাইস্কুলের ছাত্র আকাশের সাফল্যে খুশি গ্রামের মানুষ। মাধ্যমিক পরীক্ষায় তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৭। আগামী দিনে সে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রস্তুতি নিতে চায়।

    এদিন বাড়ির উঠোনে বসে আকাশ জানায়, পরিবারের সকল সদস্য, গ্রামবাসীদের সহযোগিতা ছাড়া ভালো ফল করা সম্ভব হতো না। এছাড়া স্কুলের শিক্ষক গৌতম পাত্র, তোতা পাত্র সহ সমস্ত শিক্ষকরা ভীষণভাবে সহযোগিতা করেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শালবনী থানার দহ গ্রামে ছোট্ট একটি মাটির বাড়িতেই থাকে আকাশ। তার বাবা স্বপন দাস সামান্য চাষের কাজের সঙ্গে যুক্ত। মা শম্পা দাস গৃহিণী। ছোট থেকেই অভাবকে সঙ্গী করেই বড় হতে হয়েছে আকাশকে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামের এক গৃহ শিক্ষকের কাছেই সে পড়াশোনা করেছে। একসময় অভাবের তাড়নায় পড়াশোনা বন্ধ হতেও বসেছিল। তবে ইচ্ছে শক্তির কাছে হার মেনে যায় অভাব। আকাশ বাংলায় ৯৪, ইংরেজিতে ৯৪, অঙ্কে ৯৯, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৭, জীবন বিজ্ঞানে ৯৭, ইতিহাসে ৯৭ ও ভূগোলে ৯৯ নম্বর পেয়েছে। তবে পরীক্ষার আগে চোখে সমস্যা দেখা দেওয়ায় বেশ সমস্যায় পড়তে হয় আকাশকে।

    স্বপনবাবু বলেন, একসময় পড়াশোনা চালাতে পারব না বলেই জানিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আকাশ জোর করে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে। ওর সাফল্যে সবাই খুশি। তবে আগামী দিনে কীভাবে ওর পড়াশোনা চালাব, বুঝতে পারছি না। প্রশাসনের তরফে যদি কোনও সহযোগিতা করা হয়, তবে সত্যি খুব উপকার হয়।

    স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এখানে সারা বছরই হাতির উপদ্রব থাকে। হাতির হানায় দীঘার পর বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়। কিন্তু গ্রামের ভিতরে হাতি এলেও আকাশ পড়াশোনা ছেড়ে ওঠে না। এমনকী পড়াশোনায় ক্ষতি হওয়ার ভয়ে, আকাশ মোবাইল ফোন পর্যন্ত ব্যবহার করে না। আকাশের জেঠু আলোক দাস বলেন, আকাশের জন্য আমরা সকলেই গর্বিত। ওর আরও সাফল্য আসুক, এটাই আমরা চাই। ওর পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসা রয়েছে, যা ওকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে। স্থানীয় নয়াগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিপ্লব আর্য্য বলেন, ওর সাফল্যে গোটা এলাকার মানুষ খুশি। অসাধারণ রেজাল্ট করেছে। এই এলাকা থেকে এত ভালো রেজাল্ট আর কেউ করতে পারেনি।  বাবা-মায়ের সঙ্গে  আকাশ দাস।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)