• মাধ্যমিকে ৬৪৫ দিনমজুর সোলেইমানের
    বর্তমান | ০৭ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: গ্রামে গ্রামে ফেরি করে লোহার ভাঙাচোরা সামগ্রী কেনাবেচা করেন বাবা। তাঁর একার আয়ে চারজনের পেট চালানোই দায় হয়ে পড়ে। তাই ‌পড়াশোনা চালিয়ে যেতে দিনমজুরের কাজ করে নলহাটির জেষ্টা গ্রামের সোলেইমান শেখ। আর্থিক অনটনের সঙ্গে লড়াই করে মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে সকলকে চমকে দিয়েছে সে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন তাঁর। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হতে দেবে কি না, তা নিয়েই চিন্তায় বাবা ইব্রাহিম খলিলউল্লা।

    জেষ্টাগ্রামের খড়ের চালার মাটির বাড়িতে বসবাস ইব্রাহিমের। দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় সোলেইমান। তাঁর ছেলে সোলেইমান ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভালো। জেষ্টা হাইস্কুলের যখন সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত, তখন উৎসশ্রী প্রকল্পে অনেক শিক্ষক বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে বদলি নিয়ে চলে যান। শিক্ষক কমে আসায় মাথায় বাজ পড়ার অবস্থা হয় ইব্রাহিমের। কারণ, ছেলে যে স্কুলের পড়াশোনার উপর নির্ভরশীল। তাঁর পক্ষে গৃহশিক্ষক দেওয়ার ক্ষমতা নেই। অবশেষে এই জেলার একটি আবাসিক স্কুলে ভর্তির সুযোগ পায় সে। আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতায় ভর্তি হয়ে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতে থাকে। ছুটি পেতেই ‌পড়াশোনার খরচ টানতে সে গ্রামে এসে দিনমজুরের কাজ করে। অবশেষে পরিশ্রমের ফল পেয়েছে সে। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৬৪৫। বাংলায় ৯২, ইংরেজিতে ৮০, গণিতে ৯৫,  ভৌতবিজ্ঞানে ৯১, জীবন বিজ্ঞানে ৯০, ইতিহাসে ৯৮ ও ভূগোলে ৯৯ পেয়েছে সে। তবে আগামী দিনের পড়ার খরচ নিয়ে চিন্তায় পরিবার। 

    ইব্রাহিম সাহেব বলেন, ছেলেমেয়ে পড়াশোনায় ভালো। কিন্তু আমি আর টানতে পারছি না। কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে খুবই উপকৃত হব। মা জোৎস্না বিবি বলেন, বাবার কষ্ট লাঘব করতে ছেলে পড়াশোনার ফাঁকে গ্রামে এসে শ্রমিকের কাজও করেছে। এখন সে চিকিৎসক হতে চায়। কিন্তু সেই লক্ষ্যপূরণের খরচও তো বেশি। স্বামীর আয়ে খুব কষ্ট করেই সংসার চলে। কোনও সহৃদয় ব্যক্তি আর্থিক সাহায্য করলে হয়তো স্বপ্নপূরণ হবে ছেলের। যদিও সোলেইমান বলে, কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিলেও শ্রমিকের কাজ আর টিউশন পড়িয়ে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাব।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)