নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: বকেয়া বিপুল অঙ্কের পুরকর। ফলত, ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে ইচ্ছা থাকলেও সিউড়ি পুরসভা কর্তৃপক্ষ পুকুর সংস্কারের কাজে হাত লাগাতে পারছে না। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থিক সংকট। অন্যদিকে, একাধিক পুকুরের মালিকদের হদিস না মেলায় সমস্যা আরও প্রকট হতে শুরু করেছে। নোংরা আবর্জনায় ভরে থাকা পুকুরগুলিকে কেন্দ্র করে পরিবেশ দূষণ বেড়েই চলেছে। সেইসঙ্গে ওইসব পুকুর লাগোয়া এলাকায় মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ছে। অন্যদিকে, একাধিক ক্ষেত্রে পুকুর ভরাটের চেষ্টার অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে এবার পুরসভা রাজ্য জলসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের দ্বারস্থ হতে চলেছে। একযোগে শহরের ৪২টি পুকুর সংস্কারের আর্জি জানিয়ে অতিদ্রুত ডিপিআর পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুরসভার দাবি, পুজোর পরেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা পুকুরগুলি সংস্কারের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। পুরসভার চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, প্রাথমিকভাবে ডিপিআর তৈরির কাজ চলছে। প্রথম ধাপে বাছাই করা ৪২টি পুকুর সংস্কার করা হবে। সেইসঙ্গে পাড় বাঁধানো থেকে শুরু করে পুকুরের চারদিক ফুল ও ফলের গাছ লাগিয়ে সংলগ্ন এলাকা সাজিয়ে তোলা হবে।
সিউড়ি পুরসভা এলাকায় ১০০’র বেশি পুকুর রয়েছে। একটা সময় অধিকাংশ পুকুরেই মাছচাষ হতো। এছাড়াও পুকুরের জল বাড়ির নানা কাজেও ব্যবহার করা হতো। পুজোর মরশুমে শহরের একাংশ পুকুরে প্রতিমা বিসর্জ্জনও দেওয়া হতো। কিন্তু সেসব এখন অতীত। অভিযোগ, ব্যক্তি মালিকানাধীনে থাকা বহু পুকুর বর্তমান সময়ে আবর্জনায় ভরতে শুরু করেছে। নোংরা আবর্জনার পাশাপাশি আগাছায় পুকুরগুলি একপ্রকার ব্যবহার অযোগ্য হয়ে উঠেছে। ফলত, পুকুরের ত্রিসীমানায় পা রাখা দায় হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রথমে পুরসভা কর্তৃপক্ষ মালিকপক্ষকে নোটিস পাঠানোর কাজ শুরু করেছিল। যদিও তাতে কোনও লাভ হয়নি। অন্যদিকে, বেশকিছু পুকুর মালিকের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের তরফে একাধিক সময় পুকুর সংস্কারের দাবি উঠতে থাকায় পুরসভা নড়েচড়ে বসল। শুরু হয়েছে ডিপিআর তৈরির কাজ। চলতি মাসেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ডিপিআর পাঠানোর কথা রয়েছে।
পুরসভার তরফে জানা গিয়েছে, শহরের ২১টি ওয়ার্ডের মোট ৪২টি পুকুর সংস্কার করা হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে দু’টি করে পুকুর চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিটি পুকুর সংস্কারের ক্ষেত্রে আনুমানিক ১২ লক্ষ টাকা খরচ হবে। এক্ষেত্রে ৪২টি পুকুর সংস্কারের ক্ষেত্রে ৫ কোটির বেশি টাকা খরচ হবে। পুরসভার দাবি, পুকুর সংস্কারের কাজ শেষ হলে স্থানীয় বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। পুনরায় পুকুরের জল ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে। সেইসঙ্গে পুজোর মরশুমে রীতি বজায় রেখে স্থানীয় মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জ্জনও সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।