• ব্ল্যাক আউট, এয়ার সাইরেন, মক ড্রিল, রাজ্যের ৩১টি স্পট সহ দেশজুড়ে শুরু বিকেল ৪টেয়, যুদ্ধ দামামা? মহড়া আজ
    বর্তমান | ০৭ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: যুদ্ধের দামামা কি বেজেই গেল? আজ বিকেল ৪টে। রাজ্যে শুরু হয়ে যাবে মহড়া। বাজবে এয়ার সাইরেন। প্রয়োজনে ব্ল্যাক আউট হবে জনপদ। বিভিন্ন স্পটে চলবে মক ড্রিল। যুদ্ধের শেষ পর্যায়। প্রস্তুত রাখা দেশের প্রত্যেক নাগরিকদের। সাধারণ চাকরিজীবী থেকে স্কুল পড়ুয়া, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রত্যেকে যেন আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকে। এখানেই শেষ নয়। প্রস্তুত থাকতে হবে যুদ্ধের জন্যও। স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে। দেশবাসীর উদ্দেশে এই বার্তা সরকারের। বিজেপিরও। দলের সংসদীয় পার্টিও বেনজিরভাবে তাদের শাসিত রাজ্য সরকার এবং এমপিদের নির্দেশ দিয়েছে, সাধারণ মানুষকে যুদ্ধ মহড়ায় অংশ নেওয়ার জন্য বোঝাতে হবে। তৈরি রাখতে হবে যে কোনওরকম পরিস্থিতির জন্য। প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য। শেষবার ভারতে এরকম আহ্বান এসেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। স্বেচ্ছাসেবক বা আর্মিতে নিয়োগ, সেনাবাহিনীকে সবরকম সহায়তা, এনসিসি ক্যাডেটদের মিলিটারি ক্যাম্পে কাজে লাগানো—ডাক এসেছিল সেবার সাধারণ মানুষের কাছে। স্বাধীনতার পর সরাসরি এই আহ্বান দেশবাসী শোনেনি। পহেলগাঁও হামলার প্রত্যাঘাতে আরও একবার সেভাবেই কোমর বাঁধছে ভারত। পোশাকি নাম ‘অপারেশন অভ্যাস’।

    আজ যুদ্ধ মহড়া হবে দেশের ২৪৪টি জেলায়। স্পর্শকাতর জেলা এবং শহরে অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছে মঙ্গলবারই। পাকিস্তান সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির জেলায় জেলায় এদিন অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনবসতিপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলিতে অসামরিক প্রতিরক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে যুদ্ধকালীন সময়ে আচমকা বিমান হানা হলে, সাইরেন বাজলে, শহরে ব্ল্যাক আউট হলে কী করতে হবে, সেটা বোঝানো হয়। চলে প্রশিক্ষণ। জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই অঘোষিতভাবে আপৎকালীন সব দপ্তরে ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবেও সেই ঘোষণা করা হতে পারে শীঘ্রই। সীমান্ত রাজ্য হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অধিক সংখ্যক ভাইটাল ইনস্টলেশন না থাকায় বাংলার কোনও জেলা স্পর্শকাতরতার দিক থেকে ‘এ’ ক্যাটিগরিতে পড়ছে না ঠিকই, তবে ‘বি’ এবং ‘সি’ ক্যাটিগরি মিলিয়ে মোট ১৭টি জেলার ৩১টি স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। হাসপাতালের বেড, অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়ে রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত উদ্ধারকাজ যাতে সারা যায়, সে জন্য মক ড্রিল চলবে। তৈরি রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। নবান্নের শীর্ষ সূত্রের খবর, জেলাভিত্তিক বিশেষ কন্ট্রোল রুম তৈরি থাকছে। রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে থাকবে বায়ুসেনা। পরিস্থিতি বিচারে ব্ল্যাক আউট ড্রিলও হতে পারে রাজ্যে। কতগুলি সাইরেন কার্যকর রয়েছে, প্রবল তৎপরতায় সেই হিসেবও চলছে। যেগুলি কার্যকর নেই, তাও সারানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে বিপর্যয় মোকাবিলা ও সিভিল ডিফেন্স সংক্রান্ত মন্ত্রক কাজ করছে মুখ্যমন্ত্রীর অফিস, মুখ্যসচিব এবং রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে।

     ভারতের নতুন প্রজন্ম যুদ্ধ দেখেনি। কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। শেষবার যুদ্ধ হয়েছে ২৬ বছর আগে কার্গিলে। সেই যুদ্ধও সীমাবদ্ধ ছিল মূলত কাশ্মীরে। এবার মোদি সরকারের প্রস্তুতি থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকেও পরিস্থিতি মোড় নিতে পারে। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে ভারতের অন্দরেও প্রবেশ করতে পারে সংঘাত। আজ যুদ্ধ মহড়া যাতে সম্পূর্ণ নিখুঁত হয়, সেটা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব নিজেই রাজ্যগুলির সঙ্গে কথা বলেন।  পাকিস্তানের মিসাইলের টার্গেট সীমানায় সবথেকে কাছে রয়েছে পাঞ্জাব, দিল্লি, জম্মু-কাশ্মীর, রাজস্থান, গুজরাত। তাই এই রাজ্যগুলিতে নিশ্ছিদ্র ব্যবস্থা কায়েম করতে সচেষ্ট কেন্দ্র। মঙ্গলবার দিনভর দিল্লিতে চলে মহড়া। 

    জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় গ্রামে গ্রামে কমিউনিটি বাঙ্কার তৈরি সম্পূর্ণ।  তিন সামরিক প্রধান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে মঙ্গলবার ফের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের চার সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত সরকার কথা বলেছে। পঞ্চম দেশের সঙ্গে কথা হয়নি। সেই দেশ চীন। ১৯৭১ অথবা ১৯৯৯ সালের তুলনায় ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক সমীকরণ এবং সমরকৌশল সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী। তাই সরকারি সূত্রের খবর, একবার সংঘাত শুরু হয়ে গেলে সেটির গতিপথ কোনদিকে যাবে এবং ভারতের উপর প্রভাব কতটা নেতিবাচক পড়তে পারে, সেটাও আগাম খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মঞ্চে কে কোনদিকে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, তারও আঁচ পেতে চাইছে ভারত সরকার। কারণ একবার সংঘাত শুরু হলে সেটা কয়েকদিনের মধ্যে পৌঁছবে রাষ্ট্রসঙ্ঘে। প্রোটোকল অনুযায়ী সেই সময় অন্যতম ফ্যাক্টর হবে আক্রমণকারী দেশ। অর্থাৎ প্রথমে অ্যাটাক কে করেছে। এই কারণেই রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে বিগত কয়েকদিন ধরেই ভারত বারংবার জানিয়েছে, জঙ্গিরা পাকিস্তানের নির্দেশেই হামলা চালিয়েছে পহেলগাঁওয়ে। আর তারপর লাগাতার সীমান্তে সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি ভেঙে গুলি চালাচ্ছে। সুতরাং সংঘাতের দায় পাকিস্তানেরই। চীন ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের ক্ষমতাশালী দেশগুলি ভারতের পাশে থাকারই বার্তা দিচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই সামরিক খাতের বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির সবুজ সঙ্কেত দিয়ে রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ আপৎকালীন পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে অর্থবরাদ্দের জন্য অর্থমন্ত্রক আগাম সিলমোহর দিয়েছে। তাহলে কি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ দোরগোড়ায়?
  • Link to this news (বর্তমান)