• দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের বিগ্রহ নির্মাণে পুরীর নিমকাঠ আসেনি, স্বীকার করে নিল ওড়িশা সরকার
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৭ মে ২০২৫
  • দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের বিগ্রহ যে পুরীর নবকলেবরে নির্মিত বিগ্রহের উদ্বৃত্ত নিমকাঠ থেকে হয়নি, কার্যত তা স্বীকার করে নিল ওড়িশা সরকার। পুরীর ‘শ্রীজগন্নাথ মন্দির প্রশাসন’-এর রিপোর্ট পাওয়ার পরে ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দ্রন জানিয়েছেন, দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের বিগ্রহ নির্মাণে পুরীর উদ্বৃত্ত নিমকাঠ ব্যবহৃত হয়নি। এবিষয়ে পুরীর যে সেবায়েত একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলে এই অভিযোগ করেছিলেন, তিনি এখন বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ওই সেবায়েত ‘মুখ ফস্কে’ ভুল বলে ফেলেছিলেন বলে দাবি করেছেন। আর এরপরই সরব হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আমার নামে বদনাম করলেন কেন? তা হলে কত টাকা ফাইন হওয়া উচিত?’

    মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের সুতিতে মমতা ভাষণ দেওয়ার সময় বলেন, ‘‘বলছে আমি নাকি নিমকাঠ চুরি করেছি। কান মুলে দেওয়া উচিত। বাংলায় কি নিমগাছ নেই? যাঁরা বলেছিলেন ওই কথা, তাঁরাই বলছেন ঠিক নয়।’ তিনি কারও নাম উল্লেখ না করলেও কটাক্ষ করে বলেন, ‘আমরা অত ভিখারি নই। পকেটমারও নই, জোতদারও নই। আমরা পাহারাদার।’

    প্রসঙ্গত গত ৩০ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করেন। তার আগের কয়েকদিন ধরে এই অনুষ্ঠানের একাধিক ধর্মীয় আচার পালন নিয়ে মানুষের আবেগ ও উচ্ছবাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এই কয়েকদিনে সৈকত নগরী দিঘাতে মানুষের ঢল নামে। মন্দিরে ভক্তদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। দ্বারোদ্ঘাটনের পর গত কয়েকদিন ধরে দিঘার স্টেশন সংলগ্ন জগন্নাথ ধামে লক্ষ লক্ষ ভক্তের আগমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর ঠিক তার মধ্যেই এই মন্দিরের বিগ্রহ নিয়ে বিতর্ক বাড়িয়েছেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের এক সেবায়েত। একটি বাংলা টিভি চ্যানেলের কাছে দাবি করেন, দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের বিগ্রহ পুরীর মন্দিরের নব কলেবরে নির্মিত বিগ্রহের উদ্বৃত্ত নিমকাঠ দিয়েই তৈরি হয়েছে। আর সেই বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছেন ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দ্রন। তিনি দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের বিগ্রহ নির্মাণে পুরী থেকে নিমকাঠ পাচার হয়েছে কিনা, তার তদন্তের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি, দিঘার মন্দির উদ্বোধনে পুরী থেকে কে কে গিয়েছিলেন, সেটারও তদন্ত দাবি করেন।

    এ বিষয়ে ওড়িশার আইনমন্ত্রী হরিচন্দ্রন মন্দির প্রশাসনকে লিখেছিলেন, পুরীর মন্দির থেকে নিমকাঠ অন্যত্র সরানোর ‘খবর’ অজস্র জগন্নাথ ভক্ত এবং সাড়ে চার কোটি ওড়িশাবাসীর মনে গভীর আঘাত করেছে। নিমকাঠ মন্দির থেকে অন্যত্র পাঠানোর সঙ্গে কে কে যুক্ত এবং দিঘায় বিগ্রহ ও মন্দির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে পুরীর মন্দিরের কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখতে মন্দির প্রশাসনকে অনুরোধ করেন হরিচন্দ্রন। এরপরই আইনমন্ত্রীর চিঠি পেয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করে ‘শ্রীজগন্নাথ মন্দির প্রশাসন’। এরপরই পুরীর মন্দিরের নিমকাঠ দিয়েই দিঘায় বিগ্রহ তৈরি করা হয়েছে বলে যে সেবায়েত দাবি করেছিলেন, তাঁকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই সঙ্গে পুরীতে জগন্নাথের বিগ্রহ তৈরির যাঁরা কাজ করেন, সেই মহারানা সেবকদের সঙ্গেও মন্দির প্রশাসন কথা বলে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে ওই সেবায়েত পুরীর মন্দিরের কাঠ দিঘায় পাঠানোর কথা অস্বীকার করেন। শেষমেশ তদন্তে জানা যায়, পুরীর মন্দিরে উদ্বৃত্ত হওয়া নিমকাঠ অন্য কোথাও পাঠানো হয়নি। এরপরই আইনমন্ত্রী হরিশ্চন্দ্রন সোমবার স্বীকার করে নেন, পুরীর উদ্বৃত্ত নিমকাঠ দিঘায় ব্যবহৃত হয়নি।

    তবে তিনি দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের নামকরণে ‘ধাম’ শব্দটির ব্যবহার নিয়ে আপত্তি বহাল রেখেছেন ওড়িশার আইনমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, হিন্দু পরম্পরা অনুযায়ী যে চারটি সর্বোচ্চ ধর্মীয় পীঠস্থান ‘ধাম’ হিসেবে চিহ্নিত, পুরী তার মধ্যে একটি। তাই দিঘার মন্দিরের নামকরণে ‘ধাম’ শব্দের ব্যবহার ভক্তদের মনে গভীর আঘাত হেনেছে বলে মন্তব্য করেছেন হরিচন্দ্রন। এজন্য ওড়িশা সরকার দিঘায় নবনির্মিত মন্দিরের নাম থেকে ‘জগন্নাথ ধাম’ কথাটি সরানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করবে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)