• সাইরেনের কথা মনে করিয়ে দিল ৭১-র কালো দিনগুলো
    এই সময় | ০৭ মে ২০২৫
  • অনন্ত রায়

    ১৯৭১ সালের শেষ দিক। আমার বয়স তখন ২১–২২। বাগডোগরা ফুকলাডাবরি কাছে অমর ক্যাম্পের নাপিতপাড়ায় থাকতাম আমরা। তখনও কাঁটাতারের বেড়া হয়নি। একেবারে উন্মুক্ত সীমান্ত হওয়ায় আমাদের এলাকাগুলোয় হামলা হওয়ার সম্ভাবনা থাকত সবচেয়ে বেশি।

    এখন বয়স ৭৫ পেরলেও সেই সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধের কথা স্পষ্ট মনে আছে। ফের দেশে এমন যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে ভেবেই শিউরে উঠছি। আবার সাইরেন বাজবে। ঘরে ঘরে আলো নিভে যাবে, অতীতের সেই সব দিনগুলো যেন আবার দুঃস্বপ্নের মতো ফিরে আসছে।

    বিএসএফের পাহাড়ায় থাকত গোটা এলাকা। শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। প্রথমদিন কোনও রকমে বাড়িতে ছিলাম। বিএসএফ জওয়ানরা গিয়ে গিয়ে প্রতিটি বাড়িতে নির্দেশ দিয়ে গেলেন, বাড়িতে যেন কেউ রাতে আলো না জ্বালায়। যদিও সে সময়ে আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। রাতে আলো বলতে কূপি, হারিকেন বা লন্ঠন।

    সন্ধ্যের আগে খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরের সেই আলোটুকুও নিভিয়ে দিতে হত। যুদ্ধ শুরুর দিন কয়েক পরে সেখান থেকে কোনও রকমে পালিয়ে চ্যাংড়াবান্ধায় চলে এলাম। আমি আর আমার এক দিদি আশ্রয় নিলাম এক মারওয়াড়ির দোকানে।

    তখন একটাই সাইরেন ছিল মেখলিগঞ্জে। যার আওয়াজে সতর্ক হয়ে যেত গোটা এলাকার মানুষজন। একদিন চ্যাংড়াবান্ধায় থাকার পরেই ময়নাগুড়ি ব্লকের রাজারহাটে গিয়ে এক আত্নীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠি। যুদ্ধ থামলে আবার ফিরে আসি নিজবাসায়।

    কিন্তু যখন ফিরলাম তখন চিনতে পারিনি যুদ্ধে ছেড়ে যাওয়া আমাদের অমর ক্যাম্প। আশপাশের ব্রহ্মতল, বড়ুয়াপাড়া, চাগুয়ারটারি, গোলাপাড়া সব একেবারে ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। ঠিক উল্টো দিকের দহগ্রামটাও আর নেই। চাষের জমির সব ফসল পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। জানি না এখন যুদ্ধ লাগলে আবার কেমন দিন অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

  • Link to this news (এই সময়)