• পুরোনো ব্ল্যাক আউটের স্মৃতি, হ্যাজাকে আটকানো টিনের পাত
    এই সময় | ০৭ মে ২০২৫
  • সব্যসাচী ঘোষ, মালবাজার

    ব্ল্যাক আউট, মক ড্রিল এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ড্রয়িং রুম থেকে চায়ের ঠেক, সর্বত্রই যুদ্ধ প্রস্তুতির প্রসঙ্গ। এইসব খবর শুনে অনেক প্রবীণই যুদ্ধের স্মৃতি–সাগরে ডুব দিলেন। তুলে আনলেন পুরোনো যুদ্ধকালীন সময়ের টুকরো ছবি।

    এই যেমন নিরুপমা বণিক। বয়স তাঁর নব্বই ছুঁই ছুঁই। বাড়ি মালবাজার পুর এলাকার টিচার্স কলোনিতে। ৬২–র চিন যুদ্ধ থেকে শুরু করে ৬৫, ৭১–এর বাংলাদেশের যুদ্ধ দেখেছেন। চিন যুদ্ধের সময় ব্ল্যাক আউট দেখেছেন। দেখেছেন সৈনিক খুঁজতে শহরের পাড়ায় পাড়ায় মাইকিং।

    এ দিন তিনি বলেন, ‘চিন যুদ্ধের সময় আমরা ব্ল্যাক আউট হলেই বাড়ির লণ্ঠনের আলো নিভু নিভু করে দিতাম।’ মালবাজার শহরের একসময় মিষ্টির দোকান ছিল দে পরিবারের। ষাট পেরিয়ে যাওয়া গোপাল দে আজ শারীরিক ভাবে অনেকটাই অশক্ত। কিন্তু স্মৃতির জোর অটুট।

    গোপাল বলেন, ‘ব্ল্যাক আউটের সময় দোকানের হ্যাজাকের আলো যাতে রাস্তায় না আসে সে জন্যে টিনের পাত লাগিয়ে আলো আটকানো হতো।’ মালবাজারের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা দুলালী ঘোষের বয়স এখন ৭২। বাপের বাড়ি ছিল রায়গঞ্জ দুর্গাপুরে।

    পাকিস্তানের দিকে যাচ্ছিল ভারতের সাজোয়া ট্যাংক বাহিনী। ৭১–এ ব্ল্যাক আউটের সময়ে তিন ব্যাটারির টর্চ উত্তেজনায় জ্বালিয়ে ফেলেছিলেন। সেনারা ট্যাংক থামিয়ে কোথা থেকে আলো এল তা খোঁজাখুঁজি শুরু করে। ভয় পেয়ে বাড়িতে এসে লুকিয়ে ছিলেন তিনি।

    প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকেই পাহাড়–ডুয়ার্সে অজস্র ওয়ার মেমোরিয়াল রয়েছে। গল্প গাথায় ফিরে ফিরে আসে সেই সব। প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের শৈশব মালবাজারে রেল কোয়ার্টারে কেটেছে। ওই রেল কোয়ার্টারের কাছে খেলার মাঠের পাশে জাপানি বোমারু বিমানের ধ্বংসাবশেষ পড়েছিল।

    সেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা। ৬২, ৬৫ আর ৭১ তিন বারেই হাসিমারা বায়ু সেনা ঘাটি থেকে বিমান বাহিনী আগুন ঝরিয়েছিল। মালবাজার থেকে শিলিগুড়ি গোটা পথেই সামরিক বাহিনীর ছাউনি। ১৯৯৯–এর কারগিল যুদ্ধে প্রত্যেকটি ছাউনি খালি হয়ে গিয়েছিল।

    সে সময়ে সদ্য ডাকঘরে চাকরি পেয়েছিলেন মালবাজারের যুবক কৃষ্ণ লোহার। কারগিল যাবার পথের সেনাবাহিনীর কনভয় ডাকঘরের সামনে দাঁড়ালেই সব কাজ মুলতবি করে ওঁদের কাজ আগে করার নির্দেশ ছিল। মানি অর্ডার পাঠানো, বাড়িতে টেলিগ্রাম দ্রুত গতিতে করানো হতো।

    কৃষ্ণ বলেন, ‘এক সৈনিক আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, সাব মেরে লিয়ে দোয়া কর না।’ কেন্দ্র মক ড্রিলের কথা ঘোষণা করতেই ডুয়ার্সজুড়ে যুদ্ধের স্মৃতি রোমন্থন শুরু হলো।

  • Link to this news (এই সময়)