একাধিক সুবিধা যাত্রী সাথী অ্যাপে, সম্পূর্ণ এক কোটি রাইড
আনন্দবাজার | ০৭ মে ২০২৫
সরকারি অ্যাপ যাত্রী সাথীর ব্যবহার বাড়ছে। ২০২৩ সালে পুজোর সময়ে সরকারি ভাবে শুরু হওয়ার ঠিক ১৯ মাসের মাথায় মঙ্গলবার ওই অ্যাপ ১ কোটি রাইড সম্পূর্ণ করেছে। অর্থাৎ, ওই অ্যাপ ব্যবহার করে এক কোটি বার বিভিন্ন গন্তব্যে সফর করেছেন যাত্রীরা। ওই সময়ে অ্যাপ ব্যবহার করে গাড়ি চালিয়ে চালকেরা ২৭৬ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা আয় করেছেন। অ্যাপ সূত্রে পাওয়া তথ্য আরও জানাচ্ছে, হলুদ ট্যাক্সি, ক্যাব, বাইক ট্যাক্সি মিলিয়ে ওই অ্যাপের সঙ্গে এখন যুক্ত চালকের সংখ্যা ১.১ লক্ষ। নথিভুক্ত উপায়ে ওই অ্যাপ ব্যবহার করছেন মোট ৩৬.৭২ লক্ষ যাত্রী। অল্প সময়ের মধ্যে সরকারি অ্যাপ ব্যবহারের এই পরিসংখ্যান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অ্যাপ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রাজ্যের ট্র্যাফিক, পরিবহণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের আধিকারিকেরা।
বেসরকারি অ্যাপ-ক্যাবে যাত্রী ভাড়ার উপরে চড়া হারে কমিশনের দাপট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ বাড়ছিল চালক সংগঠনগুলির মধ্যে। ওই সমস্যা নিরসনে হলুদ ট্যাক্সির চালকদের নিয়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ২০২৩ সালের জুলাই মাস নাগাদ কাজ শুরু করে যাত্রী সাথী অ্যাপ। শুরুতে নানা সমস্যা থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই অ্যাপে একাধিক পরিষেবা যুক্ত হয়েছে। কলকাতা ছাড়াও আসানসোল, শিলিগুড়ি এবং দুর্গাপুর শহরে ওই অ্যাপের আওতায় পরিষেবা চালু রয়েছে।
এই অ্যাপের মাধ্যমে ক্যাব বুক করলে বার বার মোবাইলের পর্দায় চোখ রেখে চালকের আসার অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকতে হয় না। চালক নির্দিষ্ট ‘পিক আপ লোকেশনে’ পৌঁছলে যাত্রীর মোবাইলে হর্নের ধাঁচে অ্যালার্ট বাজতে থাকে। কমিশন বা সার্জ প্রাইসিং না থাকায় ওই অ্যাপে ভাড়ার হার তুলনামূলক বিচারে কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন ব্যবহারকারীরা।
মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা বাড়াতে রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে ওই অ্যাপে একাধিক বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয়েছে। মহিলা যাত্রীরা অ্যাপের মাধ্যমে সর্বাধিক দু’জন ব্যক্তির নম্বর যুক্ত করে রাখতে পারেন। সফরের সময়ে পথের হদিস ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে সরাসরি পৌঁছে যাবে। পাশাপাশি, চালক ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল পথে গেলে অথবা রাস্তায় অকারণে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখলে অ্যাপের হেল্পলাইন থেকে সরাসরি চালকের কাছে ফোন যাওয়ার সুবিধা রয়েছে ওই অ্যাপে। সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে সরাসরি অ্যাপের হেল্পলাইনে ফোন করে সাহায্য চাওয়ার সুযোগও রয়েছে। সফরের সময়ে যাত্রীরা ক্যাবে প্রয়োজনীয় জিনিস ভুল করে ফেলে এলে খোলা রয়েছে তা নিয়ে অভিযোগ জানানোর পথও।
এ ছাড়া, ওই অ্যাপের মাধ্যমে ১৫ কেজি পর্যন্ত পণ্য পাঠানোর ব্যবস্থাও চালু হয়েছে। ইকো পার্ক, ওয়্যাক্স মিউজ়িয়াম, জেল মিউজ়িয়াম, আলিপুর চিড়িয়াখানা-সহ নিকো পার্কের মতো বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থানের টিকিট সফরের আগেই ওই অ্যাপ থেকে কাটা যায়। ফলে সেটির আকর্ষণ বাড়ছে বলে খবর। অ্যাপ সংস্থা সূত্রে খবর, যাত্রীদের সুরক্ষা বাড়াতে চালকদের ড্যাশবোর্ডে ক্যামেরা বসাতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ওই সব ক্যামেরাযুক্ত ক্যাবকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করে বর্ধিত সুরক্ষার ক্যাব হিসেবে তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সূত্রের খবর।
ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দৈনিক ২৫ হাজার যাত্রী এই অ্যাপ ব্যবহার করেন। ছোটখাটো কিছু সমস্যা ছাড়া অ্যাপটি যথেষ্ট কার্যকর।’’ এআইটিইউসি-র বাম পরিবহণ শ্রমিক সংগঠনের নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘কার্যকর অ্যাপ। তবে কিছু ক্ষেত্রে পার্কিং এবং দূরবর্তী এলাকার ভাড়া কম হওয়ার সমস্যা আছে।’’ অ্যাপের পরিষেবা উন্নত করতে পরিবহণ দফতর ছাড়াও বিভিন্ন চালক সংগঠনগুলির সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় রক্ষার উপরে জোর দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, চালকদের আর্থিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন নওলকিশোর।