এই সময়: কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের উপরে জঙ্গি হামলার পরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলা থেকে যাওয়া শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আচমকা বেড়ে গিয়েছে। গুজরাটে বুলডোজার দিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাসস্থান ভাঙা হয়েছে।
পড়শি ওডিশাতেও বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে। বাংলা থেকে যাওয়া শ্রমিকদের বিপুল সংখ্যকই মুর্শিদাবাদের মানুষ। এই শ্রমিকদের নিজেদের জেলাতেই বিভিন্ন প্রকল্পে কাজে নিয়োগের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যে ফিরে কোনও পরিযায়ী শ্রমিক যদি দোকানপাট করতে চান, তা হলে ঋণ দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুর্শিদাবাদের সুতিতে মঙ্গলবার প্রশাসনিক সভায় মমতা বলেন, ‘যাঁরা বাইরে মার খাচ্ছেন, পরিবারকে বলছি, ওঁদের ফিরিয়ে আনুন। আমি জেলাশাসককে বলব, ওঁরা যে ওখানে খেটেখুটে কাজ করেন, নির্মাণের কাজ করেন—আমাদের এখানে যে–সব নির্মাণকাজ হচ্ছে, সে–সব কাজে ওঁদের নিয়োগ করুন। কর্মশ্রী প্রকল্পে নিয়োগ করুন। দরকার নেই ভিক্ষা চাওয়ার, নিজের অধিকারে কাজ করুন।’
পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করতে রাজ্য সরকার আগেই একটি পোর্টাল তৈরি করেছে। সেখানে পরিযায়ী শ্রমিকরা নাম নথিভুক্ত করতে পারেন। রাজ্যের শ্রম দপ্তর সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদে নথিভুক্ত পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৩,৮৬,১৩১। যদিও মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতার পর্যবেক্ষণ, এই সংখ্যা বাস্তবে আরও অনেক বেশি। সুতির সভায় মমতা এ দিন সড়ক সংস্কার থেকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নতুন ভবন নির্মাণের মতো অনেক প্রকল্প ঘোষণা করেছেন।
এই সব সরকারি প্রকল্পেই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়োগের জন্য জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটা ছোট দোকান করতেও ঋণ পেতে পারেন। কার কী প্রয়োজন, চান। পরিযায়ী শ্রমিক তালিকায় নাম লেখান। মুখ্যসচিবকে বলব, যদি তফসিলি, আদিবাসী হয়— এসসি–এসটি কমিশন থেকে এবং যদি সংখ্যালঘু, ওবিসি হয়—মাইনরিটি কমিশন থেকে টার্ম লোনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
ভিন রাজ্যে পরিযায়ীদের আক্রান্ত হওয়া ঠেকাতে মুখ্যমন্ত্রী বিকল্প কর্মসংস্থানে উদ্যোগী হলেও বিজেপির অভিযোগ, এই পরিস্থিতি তৈরির জন্যে তৃণমূলই দায়ী। বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘তামিলনাড়ুর মতো অবিজেপি শাসিত রাজ্যে কী হচ্ছে? সেখানে টেক্সটাইল হাবে পরিযায়ীদের পরিচয়পত্র চেক করা হচ্ছে। অধিকাংশ ফেক পাওয়া যাচ্ছে। তার পর তাঁরা বলছেন, বাঙালিকে কাজে রাখবে না। এই পরিস্থিতি তৃণমূলের জন্যে তৈরি হয়েছে।’
যে বিপুল সংখ্যায় পরিযায়ী শ্রমিক ভিন রাজ্যে রয়েছেন, তাঁদের পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে বিকল্প কাজ দেওয়া অসম্ভব বলে মনে করেন প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী অনাদি সাহুও। তাঁর যুক্তি, ‘চেন্নাই, হায়দরাবাদ, তিরুবনন্তপুরম, দিল্লিতে দৈনিক মজুরি পাঁচশো থেকে আটশো টাকা। পশ্চিমবঙ্গের থেকে দু–তিনগুণ বেশি। তাই লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ভিন রাজ্যে যাচ্ছেন। ফুটপাথের হকারদেরই যথেষ্ট বিকিকিনি হচ্ছে না, সেখানে পরিযায়ীরা লোন নিয়ে কী ভাবে ব্যবসা করবেন?’
বিরোধী পক্ষ নানা প্রশ্ন তুললেও ভিন রাজ্যে জীবন সংশয়ের মুখে পড়ার থেকে রাজ্যে কাজ করা অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত বলে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি। বিভিন্ন রাজ্যে বাংলার শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নিয়ে রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক ওয়েলফেয়ার বোর্ডের পক্ষ থেকে সাংসদ সামিরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে সোমবার চিঠিও দিয়েছেন। মুখ্যসচিবও কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়েছেন। মমতার কথায়, ‘রাজ্যে রাজ্যে বিরোধ কমাও। মনে রেখো, রাজ্যে রাজ্যে বিরোধ লাগলে দেশ ভালো থাকে না। রাজধর্ম সবাইকে পালন করতে হবে।’