দিব্যেন্দু সরকার, আরামবাগ
আজ তার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোবে। কিন্তু তার আগেই অন্য এক কঠিনতম পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে বাড়ি ফিরল তারকেশ্বরের ঐন্দ্রিলা। তার বয়সি মেয়েরাও যাতে রাস্তায় একা বেরোলে নিরাপত্তাহীনতা ঘিরে না ধরে, সেই নিয়ে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে সাইকেলে চেপেই অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ছুঁয়ে ফিরে এল এই সাহসী কন্যা। একা একাই।
ঐন্দ্রিলা আঢ্যের বাড়ি তারকেশ্বর পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পদ্মপুকুর এলাকায়। এ বছর তারকেশ্বর মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে ঐন্দ্রিলা। তার আগেই অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প জয় করে সোমবার বাড়ি ফেরে ঐন্দ্রিলা।
বিশ্বের প্রথম কনিষ্ঠ মহিলা সাইক্লিস্ট হিসেবে দু’টি বেস ক্যাম্প জয়ের রেকর্ড গড়েছে ঐন্দ্রিলা। একটি মাউন্ট ফিশ টেল বা মাউন্ট মচ্ছা পুচারে, যার উচ্চতা ৩৭০০ মিটার আর একটি অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প, যার উচ্চতা ৪১৩০ মিটার।
গত ২২ মার্চ তারকেশ্বর থেকে সাইকেল নিয়ে অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প জয়ের উদ্দেশে বেরোয় ঐন্দ্রিলা। গত ১৭ এপ্রিল প্রথমে মাউন্ট ফিশ টেল বেস ক্যাম্প জয় এবং পরের দিন, ১৮ এপ্রিল অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প জয় করে সে। এতটা কঠিন পথে তার সঙ্গী ছিল শুধু তার সাইকেল আর অসামান্য মনের জোর!
দু’টি বেস ক্যাম্প জয় করে ৫ মে রাত আটটা নাগাদ তারকেশ্বরে পৌঁছে প্রথমেই পরিবারের সঙ্গে তারকেশ্বর মন্দির দর্শন করে ঐন্দ্রিলা। এর পরেই এলাকার বাসিন্দারা ফুলের মালা দিয়ে শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দেন তাকে। ঐন্দ্রিলার এই বিশ্ব রেকর্ডে খুশি তার পরিবার ও তারকেশ্বরবাসী।
কিন্তু কেন এই যাত্রা? নিছকই পর্বতপ্রেম? ঐন্দ্রিলার দাবি, মেয়েরা যাতে একা একা বাইরে বেরিয়ে সুরক্ষিত থাকে, সেই বার্তাই সে সমাজকে দিতে চেয়েছে। তার মন্তব্য, ‘আজকের দিনে মেয়েদের ঘর–বার সবই সামলাতে হয়। বিভিন্ন কাজে সময় দিতে হয়। পরিবারের পাশাপাশি সমাজের জন্য বা কাজের ক্ষেত্রে মহিলাদের বাইরে যেতেই হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে মহিলারা এখনও নিরাপত্তার অভাবে ভোগেন। তার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। নিজে একা একা এতটা পথ সাইকেলে পার হয়ে আমি শুধু মেয়েদের সাহসী হওয়ার বার্রাতা দিতে চেয়েছি।’
ঐন্দ্রিলার মা রুমা আঢ্য ও বাবা শম্ভূনাথ আঢ্য জানান, ‘আমাদের মেয়ের এই একাগ্রতা ও পরিশ্রম আজ তাকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে।খুবই গর্বিত আমরা। মেয়ের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল আজ। দেখি কী হয়। এক–দেড় মাস বাইরে ছিল। মন খারাপ লাগছিল। অনেক কষ্ট করেছে মেয়ে। আমি শুধু বলতাম, তোকে পারতেই হবে। আজকের দিনে মায়েদের এই ভাবেই সন্তানদের পাশা থাকা উচিত।’