ওয়েব সিরিজ়ের পোকা, উচ্চ মাধ্যমিকে চতুর্থ শ্রীজিতা বললেন, বিষয়বস্তু বুঝে পড়াশোনায় এল সাফল্য
আনন্দবাজার | ০৭ মে ২০২৫
যে বয়সে মা-বাবাই সন্তানের আশ্রয়, সেই বয়সেই মা-হারা। এক লহমায় বদলে যায় জীবনের গতিপথ। সেই মেয়েই এ বার উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় চতুর্থ। বাঁকুড়ার সোনামুখী গার্লস হাই স্কুলের শ্রীজিতা ঘোষালের প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৪ (৯৮.৮ শতাংশ)।
বাঁকুড়া জেলার সোনামুখীর বাসিন্দা শ্রীজিতা। ছোট থেকে স্কুলশিক্ষক বাবা-ই নির্ভরতার জায়গা। মা চলে যাওয়ার পর কোনও ঝড়ঝাপটার আঁচ আসতে দেননি মেয়ের উপর। মেয়ের সাফল্যে আপ্লুত বাবা বললেন, “বরাবরই পড়াশোনায় ভাল ও। কখনও আলাদা করে বলতে হয়নি। কিন্তু তাই বলে মেধাতালিকায় স্থান দখল করে নেবে, সেটা একেবারেই আশা করিনি।”
ফোনের ওপার থেকে শ্রীজিতার গলাতেও উচ্ছ্বাস ধরা পড়ল। বললেন, “বাবা যা বলল, আমারও একই প্রতিক্রিয়া। ভাল ফল আশা করেছিলাম। মেধাতালিকায় স্থান পাব, এতটা ভাবিনি।” তা হলে কি সারাদিন পড়াশোনা করেই সাফল্য? হাসতে হাসতে উত্তর এল, “না না, আমি পড়তে ভালবাসি। কিন্তু তাই বলে রুটিন মেনে পড়িনি। যেটুকু পড়তাম, বিষয়বস্তু বোঝার চেষ্টা করতাম।”
আর পাঁচ জনের মতোই উচ্চ মাধ্যমিকে চতুর্থ শ্রীজিতার পছন্দ ওয়েব সিরিজ়। অবসরে গান শুনে আর ছবি এঁকেও মন হালকা করেন শ্রীজিতা। মা-কে হারিয়ে কি বাবা-ই এখন তাঁর আড্ডা মারার সঙ্গী? উত্তর এল, “না, বাবা আমার আশ্রয়। কিন্তু মনের কথা ভাগ করি বন্ধুদের সঙ্গেই।”
আপাতত, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চান শ্রীজিতা। পছন্দের বিষয় ডেটা অ্যানালিটিক্স এবং কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন। এর জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাও দিচ্ছেন তিনি। তবে সে ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল না হলেও হার মানতে নারাজ। জীবন যেমন হার মানাতে পারেনি তাঁকে। কোনও ফলাফল তাঁর জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করে দেবে না বলেই মনে করেন শ্রীজিতা।
এ বছর পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ৩ মার্চ, শেষ হয় ১৮ মার্চ। অর্থাৎ পরীক্ষা শেষের ৫০ দিনের মাথায় ঘোষণা করা হল ফলাফল। এ বছরই বার্ষিক ব্যবস্থায় শেষ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ছিল। এর পর চালু হচ্ছে সেমেস্টার ব্যবস্থা। চলতি বছরে ৬২টি বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক দিতে পেরেছেন পরীক্ষার্থীরা। গত বছর সংখ্যাটি ছিল ৬০। এ বছর যে নতুন দুটি বিষয়ে পরীক্ষাগ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলি হল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ডেটা সায়েন্স। চলতি বছরে 'রেগুলার ভিত্তিতে' নাম নথিভুক্ত করেছিলেন ৪,৮২,৯৪৮ জন। পরীক্ষা দিয়েছেন ৪,৭৩,৯১৯ জন। গত বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে।