কেমো শরীরটা একেবারে ভেঙে দিয়েছিল মেয়েটার। তবু তার দু’ চোখে ছিল দিদিমণি হওয়ার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে সত্যি করতেই হাসপাতালের বেডে বসে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিল চন্দননগরের সুজলি পাত্র। বুধবার রেজ়াল্ট বেরোনোর পর দেখা গেল, সুজলি ৩১৬ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। তবে এই আনন্দ উদযাপন করবে কে? সুজলিই তো নেই। ২৮ এপ্রিল মারণ রোগ ক্যান্সার চিরতরে শেষ করে দিয়েছে তাকে।
সুজলির যখন ১১ দিন বয়স, মা মারা যান। বাবা নতুন করে জীবন শুরু করেন। সেই থেকে সুজলির দেখভালের দায়িত্ব মামার। চন্দননগর কেএমডিএ পার্ক সংলগ্ন এলাকায় মামার বাড়ি। সুজলি যখন একাদশ শ্রেণিতে, সেই সময় ক্যানসার ধরা পড়ে।
প্রথমে ওভারিতে টিউমার। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর জানা যায় তা ম্যালিগন্যান্ট। সেই থেকে নতুন লড়াই শুরু সুজলির, যে লড়াই থামল ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে। পড়াশোনায় সুজলি বরাবরই ভালো ছিল। দিদিমণিরাও খুব ভালোবাসতেন।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন শরীর খারাপ করেছিল সুজলির। এনআরএসের বেডে বসে চারটি পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। ভালো ভাবে পাশ করল, কিন্তু রেজ়াল্টটা দেখা হলো না। মন খারাপ স্কুলের দিদিমণিদের। কান্না দলা পাকিয়ে আসছে মামার গলার কাছেও।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার হুগলি জেলার জয়েন্ট কনভেনার শুভেন্দু গড়াইয়েরও মনে আছে, পরীক্ষা চলাকালীন সুজলি অসুস্থ হওয়ার পর কী ভাবে হাসপাতালে পরীক্ষা দেওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। মন খারাপ তাঁরও।
মামা সত্যজিৎ রায় মণ্ডলপাড়া জুট মিলে কাজ করেন। খুব কষ্ট করে ভাগ্নিকে মানুষ করছিলেন। বুধবার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অর্পিতা মণ্ডল যখন ফোন করে সুজলির পাশের খবরটা দেন, কেঁদে ফেলেন মামা। সেই কবে কোলে করে নিজের কাছে নিয়ে এসেছিলেন ভাগ্নিকে। মাসখানেক আগে তাকে চির বিদায় দিতে গিয়ে হাউ হাউ করে কেঁদেছিলেন। আজও সামলাতে পারলেন না নিজেকে।