বাবার ইচ্ছে ছিল তাঁর দুই ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। কিন্তু সন্তানদের সাফল্য দেখে যেতে পারেননি মিনতি হেমব্রমের বাবা। কিডনির সমস্যা জনিত কারণে পাঁচ বছর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। তবে বাবার সেই ইচ্ছে এ বার পূরণ করল উচ্চ মাধ্যমিকে সাঁওতালি মাধ্যমে রাজ্যের মধ্যে প্রথম মিনতি। ৫০০-এর মধ্যে তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৩। সংসারের অভাব অনটনের মধ্যেও বাবার ইচ্ছে পূরণ করতে পেরে খুশি মিনতি ও তার মা।
রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত ঝাড়গ্রাম একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের কলা বিভাগের ছাত্রী মিনতি। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই সে ওই স্কুলে পড়ছে। মিনতি সাঁওতালি বিভাগে রাজ্যের মধ্যে প্রথম হলেও তার বাকি বিষয়গুলি ছিল বাংলাতেই। কোন বিষয়ে কত পেয়েছে কৃতী পড়ুয়া? মিনতি সাঁওতালিতে ৯৪, ইংরেজিতে ৯০, ভূগোলে ৮১, ইতিহাসে ৯২, স্বাস্থ্য ও শারীরিক বিজ্ঞানে ৯৭ এবং সংস্কৃতে ১০০ পেয়েছে। নিজের নম্বর দেখার পর কী বলছে কেন্দুগাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঁদনাশোল গ্রামের বাসিন্দা মিনতি?
কৃতী পড়ুয়া বলেন, ‘বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে আমি খুব খুশি। সাঁওতালি, ইতিহাস এই দুটি বিষয়ই আমার প্রিয়। আমার উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন রয়েছে। কিন্তু পরিবারের হাল টানতে আমাকে গুজরাটে যেতে হবে। স্কুল থেকে গুজরাটে আমাদের জন্য ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করেছে। সেখানে ট্রেনিং নেওয়ার পাশাপাশি আমরা স্টাইপেন পাব। ট্রেনিং শেষে চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পাব। গুজরাটেই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছে রয়েছে।’
মিনতির মা সলমা হেমব্রম বলেন, ‘ওর বাবা বলে গিয়েছিল ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। ওরা যেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মেয়ে এত ভালো রেজ়াল্ট করবে ভাবতে পারিনি।’ সেই স্কুলের তত্ত্বাবধানে থাকা রামকৃষ্ণ মিশনের বিশ্বনাথ মহারাজ বলেন, ‘এ বার কলা ও বিজ্ঞান বিভাগ মিলিয়ে ৫৭ জন পড়ুয়া উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। ৫৭ জনই ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। মিনতি হেমব্রম রাজ্যের মধ্যে সাঁওতালি বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। ওর সাফল্যে আমরা অত্যন্ত খুশি।’