উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, তাঁর আগেই জীবন যুদ্ধে পরাজিত চন্দননগরের ছাত্রী...
আজকাল | ০৮ মে ২০২৫
মিল্টন সেন,হুগলি: শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সেই খবর পাওয়ার আগেই তারার দেশে পাড়ি দিলেন। জীবনযুদ্ধে পরাজিত চন্দননগর লালবাগান স্কুলের ছাত্রী সুজলি পাত্র। মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করেন। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সেখানেও প্রথম বিভাগে পাশ করেছেন। তবে উত্তীর্ণ হওয়ার খবর পাওয়া হল না। দেখা হল না রেজাল্ট।
এপ্রিল মাসের ২৮ তারিখে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় সুজলির। মাধ্যমিক পাশ করার পরই ২০২৩ সালে জানা যায়, তার শরীরে মারণ রোগ ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। প্রথমে তার ওভারিতে টিউমার ধরা পড়ে। সেই টিউমার থেকে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। অপারেশন করা হয়। চলতে থাকে কেমো থেরাপি। এভাবেই দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন। সঙ্গে চলতে থাকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি।
শুরু থেকেই স্কুলের মেধাবী ছাত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। দ্রুত সে স্কুলে শিক্ষিকাদের প্রিয় হয়ে ওঠে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আসন পড়েছিল চন্দননগর কৃষ্ণভাবনী নারী শিক্ষা মন্দিরে। শারীরিক অসুস্থতা প্রকট ছিল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন। অসুস্থতার কারণে পরীক্ষা চলাকালীন কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজে ভর্তিও করা হয় তাঁকে। শেষ চারটি পরীক্ষা দিয়েছিলেন হাসপাতাল থেকেই।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অর্পিতা মন্ডল জানিয়েছেন, শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করত সুজলি। সেই প্রত্যাশা পূরণ হল না। ছাত্রীর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন হুগলি জেলা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জয়েন্ট কনভেনার শুভেন্দু গড়াই। তিনি বলেছেন, 'ছাত্রীর অসুস্থতার খবর পেয়েই তাকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এনআরএস হাসপাতাল থেকে যাতে পরীক্ষা দিতে পারে তা ঠিক করা হয়েছিল । ছাত্রী অত্যন্ত মেধাবী ছিল। অনেক কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু রেজাল্ট দেখে যেতে পারল না।'
মাত্র ১১ দিন বয়েসেই মাকে হারিয়েছিলেন সুজলি। সেদিন থেকেই মামা সত্যজিৎ রায়ের কাছে মানুষ হয়েছেন। মণ্ডলপাড়া জুটমিলের শ্রমিক মামা অনেক কষ্ট করে তার ভাগ্নীকে মানুষ করছিলেন। ক্যান্সার ধরা পড়ার পর তাঁর সবরকম চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। স্কুলের শিক্ষিকারাও বিভিন্ন সময় সুজলিকে নানান সাহায্য করেছেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বুধবার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অর্পিতা মণ্ডল মামাকে ফোন করে ভাগ্নির সফলতার খবর দেন। খবর শুনে দু চোখ জলে ভিজে আসে মামার। প্রথম বিভাগে পাশ করেছে ভাগ্নী। আক্ষেপ, রেজাল্ট দেখে যেতে পারল না।ছবি পার্থ রাহা।