সৌরভ চৌধুরী: সাঁওতালিতে উচ্চ মাধ্যমিকে (Santali Uchcha Madhyamik Result 2025) প্রথম দিনমজুরের বাড়ির মেয়ে! দারিদ্র্যকে জয় করে সাঁওতালি মাধ্যমে (Santali Language) প্রথম ঝাড়গ্রামের (Jhargram) কাঁদনাশোলের মিনতি। এবারের উচ্চ মাধ্যমিকে সাঁওতালিতে প্রথম ঝাড়গ্রাম একলব্য মডেল রেসিডেন্সি স্কুলের ছাত্রী মিনতি হেমব্রম। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৩।
দিনমজুরের মেয়ে
বাবা নেই! অভাবের সংসারে খরচ চালানো কষ্টসাধ্য। খরচ জোগাতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান মা সলমা হেমব্রম। তবে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল ঘোষণা হতেই অভাবী সংসারে খুশির আলো। নিজের জেদকে সামনে রেখে আজ রাজ্যে প্রথম ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে। উচ্চমাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৩।
স্বপ্ন
প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ের স্বপ্ন ছিল-- সে মাতৃভাষার জন্য কিছু করবে। সাঁওতালি মিডিয়ামের বেশ কিছু স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেগুলোকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া তার লক্ষ্য। উচ্চশিক্ষার জন্য সে বেছে নিয়েছে পলিটিক্যাল সায়েন্সের মতো বিষয়।
কাঁদনাশোলের শিক্ষা-সংস্কৃতি
সাঁওতালি ভাষায় উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হল দিনমজুর বাড়ির মেয়ে মিনতি হেমব্রম। সাঁওতালি মিডিয়ামে রাজ্যের মধ্যে প্রথম ঝাড়গ্রামে একলব্য মডেল আবাসিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী মিনতি। মিনতি হেমব্রম সাঁওতালি ভাষায় ৪৭৩ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় রাজ্যে প্রথম। কেবল গোপীবল্লভপুর জঙ্গলমহল নয়। সারা ঝাড়গ্রাম-সহ পশ্চিমবঙ্গের মুখ উজ্জ্বল করেছে সে। মা দিনমজুর। বাবা পাঁচ বছর আগে মারা গিয়েছেন। নিজের জেদকে সামনে রেখে আজ রাজ্যে প্রথম।
জেলার কৃতী
এদিকে একই রকম কৃতিত্বের কাজ করেছে কোয়েল। কোয়েলের বাবা অশোক গোস্বামী হাটে পান সুপারি বিক্রি করেন। এরকম দরিদ্র পরিবারের মেয়ে কোয়েল। জলপাইগুড়ির প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে কোয়েল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সপ্তম স্থান অধিকার করে নিল। চরম দারিদ্র্যকে পিছনে ফেলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সপ্তম স্থান দখল করে নিল জলপাইগুড়ির কচুয়া বোয়ালমারি হাইস্কুলের এই কোয়েল গোস্বামী। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯১, স্কুলের ৬৫ বছরের ইতিহাসের কচুয়া বোয়ালমারি হাইস্কুল থেকে এই প্রথম উচ্চ মাধ্যমিকের কোনও পড়ুয়া সেরা দশে স্থান পেল!
খুব স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত কোয়েলের পরিবার। জানা গিয়েছে, কোয়েলের বাবা অশোক গোস্বামী সামান্য জমিতে কৃষিকাজ করেন। এর পাশাপাশি তিনি পান-সুপারি বিক্রি করেন। তিনি এক অতি দরিদ্র মানুষ। অত্যন্ত দরিদ্র তাঁর পরিবারও। আর সেই পরিবারেরই মেয়ে কোয়েল। এই পরিস্থিতিতে সব বিষয়ে গৃহশিক্ষক রাখার মতো সামর্থ্য তাঁর ছিল না। তাই স্কুলের শিক্ষকরাই কোয়েলের জন্য আলাদাভাবে কোচিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি আবৃত্তি ও গানেও পারদর্শী কৃতী কোয়েল। স্কুলের যে কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় সে। স্কুল ও বোর্ডের পরীক্ষায় বরাবর তাক-লাগানো সাফল্য পেয়েছে। জলপাইগুড়ি সদর পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি বিনয় রায় কোয়েল গোস্বামীকে মিষ্টিমুখ করিয়ে ফুলের তোড়া দিয়ে সম্বর্ধনা জানান।