প্রিন্সিপালের সার্ভিস কনফার্মেশন না করে ডিসচার্জ করল পরিচালন সমিতি, বিতর্ক
বর্তমান | ০৮ মে ২০২৫
বাবুল সরকার, কুমারগ্রাম: কুমারগ্রামের ব্লকের কামাখ্যাগুড়ির শহিদ ক্ষুদিরাম কলেজের পরিচালন সমিতির সঙ্গে প্রিন্সিপালের বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছল। এর জেরে প্রিন্সিপালের এক বছরের প্রবেশন পিরিয়ড পার হওয়ার পরেও তাঁর সার্ভিস কনফার্মেশন না করে ডিসচার্জ করে দেওয়া হল। বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়েছে কলেজে।
২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল শহিদ ক্ষুদিরাম কলেজের প্রিন্সিপাল পদে যোগ দেন জলপাইগুড়ির পিডি ওমেন্স কলেজের অধ্যাপক শ্যামলচন্দ্র সরকার। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর এক বছরের প্রবেশন পিরিয়ড শেষ হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও কলেজের পরিচালন সমিতি প্রিন্সিপালের সঙ্গে বিরোধের জেরে তাঁর সার্ভিস কনফার্মেশন করেনি। মঙ্গলবার কলেজের পরিচালন সমিতির জরুরি সভায় তাঁকে ডিসচার্জ করে দেওয়া হয় এবং কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক স্মৃতিকান্ত বর্মনকে টিআইসি পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বুধবার সকালে এসে শ্যামলচন্দ্র সরকার দেখেন, কলেজ খোলা থাকলেও প্রিন্সিপালের ঘর তালা মারা। তাই তিনি রুমে ঢুকতে পারেননি। পরে তিনি কলেজের অফিসে এবং টিচার্স কমন রুমে বসেন। এদিকে, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক স্মৃতিকান্ত বর্মন এদিন টিআইসি পদে দায়িত্ব নেন।
শ্যামলচন্দ্র সরকার বলেন, পরিচালন সমিতি জরুরি সভা ডেকে আমাকে ডিসচার্জ করে দিয়েছে। পরিচালন সমিতির সভাপতি ওই সভা ডেকেছিলেন। কিন্তু সরকারি নিয়মে সভাপতি জরুরি সভা ডাকতে পারেন না। ওই সভা সম্পূর্ণ অবৈধ। আমাকে অনৈতিকভাবে ডিসচার্জ করা হল। আমি আদালতের দ্বারস্থ হব। এর আগে পরিচালন সমিতি তরফে সাদা কাগজে ১২টি প্রশ্ন লিখে দিয়ে আমার কাছে উত্তর চাওয়া হয়। আমি সেগুলির উত্তর দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে পরিচালন সমিতির সভাপতি ও সরকার মনোনীত এক সদস্য সন্তুষ্ট হননি। যদিও সেই প্রশ্নগুলি ছিল ভিত্তিহীন। সমিতির কয়েকজন নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে পারছিলেন না। তাই চক্রান্ত করে আমাকে সরানো হল।
এদিকে, কলেজের অধিকাংশ অধ্যাপক চাইছেন শ্যামলচন্দ্র সরকারকে সার্ভিস কনফার্মেশন দেওয়া হোক। বিষয়টি যেন পরিচালন সমিতি বিবেচনা করে তারজন্য কলেজের অধ্যাপকরা লিখিতভাবে এই আবেদন জানিয়েছেন। টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক তথা ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক অভিজিৎ সরকার বলেন, আমরা পরিচালন সমিতির কাছে একটি লিখিত আবেদন জানিয়েছি, যেন প্রিন্সিপালের ডিসচার্জের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হয়। আবেদনের প্রতিলিপি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছেও পাঠানো হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা হয়েছে। এই অচলাবস্থার জন্য কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া ও অন্যান্য কাজকর্ম যেন ব্যাহত না হয়, আমরা এটাই চাই।
যদিও কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি শুক্লা ঘোষ বলেন, শ্যামলচন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে সমিতিকে অন্ধকারে রেখে কলেজের বিভিন্ন কাজকর্ম করার অভিযোগ ছিল। তাই তাঁর সার্ভিস কনফার্মেশন না করে তাঁকে ডিসচার্জ দেওয়া হয়েছে। উনি সমিতিকে অন্ধকারে রেখে কলেজের স্নাতকোত্তর স্তরে শিক্ষক নিয়োগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে পরিষ্কার বলা আছে, পরিচালন সমিতির জরুরি সভা একমাত্র সভাপতিই ডাকতে পারেন।
টিচার্স রুমে বসে শ্যামলচন্দ্র সরকার। - নিজস্ব চিত্র।