সন্দীপন দত্ত, মালদহ: কারও পরিবারের দিন গুজরান হয় দিনমজুরি করে। কারও জন্ম আবার দরিদ্র কৃষক পরিবারে। কেউ মালদহের প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দা। চরম পারিবারিক দারিদ্রের কারণে সরকারি উদ্যোগে এদের হোমে নিয়ে আসা হয়েছিল। এবছর সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন শ্যাম, প্রশান্ত, তাপস, রামেনরা। তাদের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকে ‘এ’ গ্রেড পেলেন হোমের দুই আবাসিক।
মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিঙ্ঘানিয়া বলেন, নারী ও শিশু কল্যাণ এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তরের সহযোগিতায় আমরা এই বাচ্চাদের পাশে দাঁড়াতে পারছি। চেষ্টা করছি যাতে আরও ভাল ফল করতে পারে। পুরাতন মালদহের প্রত্যন্ত এলাকা হারকোঠা আন্ধারকোঠা এলাকার এক দরিদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে শ্যাম হেমব্রম। পরিবারে চরম অভাবে লেখাপড়া তো দূরের কথা, দু’বেলা খাবার জোগাড় করা ছিল তাদের জীবনের সবথেকে বড় পরীক্ষা। তার মেধা ও অভাবের বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। ২০১৭ সালে শ্যামকে নিরাপদ কটেজ হোমে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠা। এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন শ্যাম। কলা বিভাগের এই ছাত্র ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪০৭। এই হোমেরই আরেক আবাসিক তাপস মাহাতো। তিনিও এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন। তাপসের প্রাপ্ত নম্বর ৪০১। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তাপসের বাবা সনাতন মাহাতো পেশায় একজন শ্রমিক। স্ত্রী, পুত্র নিয়ে ছোট্ট সংসারে হাঁড়ি চড়ানোই দায়। সেখানে ছেলের পড়াশোনা চালানো তো অনেক দূরের কথা। মালদহ জেলার গাজোল ব্লকের দাওয়াল বিজলবাড়ির এক চিলতে ঘর থেকে তাপসের ঠিকানা হয়ে দাঁড়ায় হোম। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানান, ২০১৭ সালে পরিবারের অভাবের কারণে তাপসকে হোমে নিয়ে আসা হয়। গাজোলের শ্রীরামপুর গান্ধীনগরের বাসিন্দা প্রশান্ত টুডুকেও তার একই কারণে ২০২০ সালে নিরাপদ কটেজ হোমে নিয়ে আসা হয়েছিল। শ্রমিক পরিবারের ছেলে প্রশান্তর উচ্চ মাধ্যমিকের প্রাপ্ত নম্বর ৩৭৪। হবিবপুরের জোডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা রামেন কিস্কু এবছর উচ্চ মাধ্যমিকে আশানুরূপ ফল করতে পারেননি। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ২৫০।