আরামবাগ হাইস্কুলের ছাত্র তৃতীয় রাজর্ষি অধিকারী ডাক্তার হতে চান
বর্তমান | ০৮ মে ২০২৫
রামকুমার আচার্য, আরামবাগ: উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে তৃতীয় স্থান দখল করে নজর কাড়লেন আরামবাগ হাইস্কুলের ছাত্র রাজর্ষি অধিকারী। যমজ ভাইয়ের সঙ্গে গ্ৰুপ স্টাডি করেই রাজর্ষি পড়াশোনা করেছেন। তাতেই এসেছে সাফল্য। তাঁর ভাই দেবর্ষিও ভালো রেজাল্ট করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই বুধবার বাড়িতে ছিল খুশির হাওয়া। প্রতিবেশী ও পরিচিতরা তাঁদের বাড়িতে ভিড় জমান। চলে মিষ্টিমুখ।
রাজর্ষির বাবা মিহির অধিকারী ও মা জয়ন্তী ঢালি অধিকারী আরামবাগের ডহরকুণ্ডু শ্রীরামকৃষ্ণ হাই স্কুলের শিক্ষক। তাঁদের আসল বাড়ি নদীয়ার পায়রাডাঙার কুশুরিয়া গ্রামে। চাকরি সূত্রে তাঁরা আরামবাগের ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় থাকেন। ছেলেদের সাফল্যে তাঁরা খুব খুশি। রাজর্ষি ৪৯৫ নম্বর পেয়েছেন। বড় হয়ে তিনি চিকিৎসক হতে চান। রাজর্ষির যমজ ভাই দেবর্ষিও ৪৩৮ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজর্ষি মাধ্যমিকে ৬৭৮ নম্বর পেয়েছিলেন। সামান্য কিছু নম্বরের জন্য মেধা তালিকায় আসতে পারেননি। সেই আক্ষেপ মিটল উচ্চ মাধ্যমিকে। রাজর্ষি বাংলায় ৯৩, ইংরেজিতে ৯৬, পদার্থ বিজ্ঞানে ১০০, গণিতে ১০০, রসায়ন বিদ্যায় ১০০ ও জীবন বিজ্ঞানে ৯৯ নম্বর পেয়েছেন। রাজর্ষি জানিয়েছেন, তাঁর প্ৰিয় বিষয় গণিত। তিনি কখনওই বাঁধাধরা কোনও রুটিনে পড়েননি। যখনই পড়তে ভালো লাগত, পড়তেন। তবে রাত জেগে পড়াশোনা তাঁর পছন্দের। উচ্চ মাধ্যমিকে তাঁর সাতটি টিউশনি ছিল। বাবা, মায়ের কাছ থেকেও তিনি গাইড পেয়েছেন। পড়ার ফাঁকে রাজর্ষি তবলা বাজাতে ভালোবাসেন। তবে পরীক্ষার জন্য তবলায় খুব একটা সময় দিতে পারেননি। গল্পের বই পড়তেও তাঁর ভালো লাগে। তিনি বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চান। ইতিমধ্যেই তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েছেন। সেই পরীক্ষাও ভালো হয়েছে।
পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে? রাজর্ষি বলেন, ভাই একইসঙ্গে পড়ায় আমরা গ্ৰুপ স্টাডি করতাম। পড়ার পর তা একে অপরকে ধরতাম। তাতে ভুলগুলি বোঝা যেত। কোনও বিষয়ের পড়ায় ভাইকে বোঝাতে গিয়ে নিজেরও তা ভালো করে রপ্ত হয়ে যেত। পাঠ্যবই খুঁটিয়ে পড়েছি। ভালো মনে রাখার জন্য লিখে লিখেও প্র্যাকটিস করেছি। একাধিকবার মক টেস্ট দিয়েছি। সেখান থেকেও ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করতে পেরেছি। কৃতী ওই ছাত্র আরও বলেন, বাবা, মা, স্কুল ও টিউশনির শিক্ষকদের সাহায্য পেয়েছি অফুরান। এই সাফল্যের পিছনে প্রত্যেকেরই অবদান রয়েছে। কোনও সময় কিছু বিষয় বুঝতে অসুবিধা হলে স্কুলের শিক্ষকদেরও সাহায্য নিয়েছি।
দাদার সাফল্যে খুশি দেবর্ষিও। তিনি বলেন, দাদার সঙ্গে একসাথে পড়াশোনা করেছি। দাদার তৃতীয় হওয়ায় খুব ভালো লাগছে।
তৃতীয় স্থানে ছেলের নাম ঘোষণা হতেই মায়ের চোখে দেখা যায় আনন্দাশ্রু। জয়ন্তীদেবী বলেন, ছেলেরা ভালো রেজাল্ট করবে তা প্রত্যাশিত ছিল। প্রত্যাশা পূরণ হওয়ায় চোখে জল আসছে। মাধ্যমিকে সামান্য কিছু নম্বরের জন্য রাজর্ষি মেধা তালিকায় আসতে পারেনি। এখন তাই খুব ভালো লাগছে। রাজর্ষির বাবা বলেন, ছেলেকে পড়ার জন্য কোনওদিন বলতে হয়নি। নিজের ইচ্ছেতেই পড়ত।