নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক, মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম: উচ্চ মাধ্যমিকে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের ১০জন ছাত্রছাত্রী মেধা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিকেও দাপট দেখালেন বিদ্যাসাগরের জেলার কৃতী পড়ুয়ারা। মাধ্যমিকে ঝাড়গ্রাম জেলা থেকে এবছর কেউ র্যাঙ্ক করতে পারেনি। তাই খানিকটা আফশোস ছিল। উচ্চ মাধ্যমিকে অবশ্য জেলার নাম উজ্জ্বল করেছেন দুই কৃতী। একজন মেধা তালিকায় নবম এবং অপরজন সাঁওতালি মাধ্যমে রাজ্যে প্রথম হয়েছেন।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁচজন ছাত্রছাত্রী মেধা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে তাঁদের চারজনই ছাত্রী। এগরার ঝাটুলাল হাইস্কুলের জৈৎসী ঘোষ ৪৯১নম্বর পেয়ে সপ্তম হয়েছেন। মাধ্যমিকে ইতিহাসে প্রত্যাশিত নম্বর না হওয়ায় তিনি মেধা তালিকায় স্থান পাননি। যদিও উচ্চ মাধ্যমিকে সেই খেদ মিটেছে। তাঁর বাবা অঙ্কের অধ্যাপক। ওই কৃতী অবশ্য ডাক্তার হতে চান।
এগরার স্বর্ণময়ী গার্লস হাইস্কুলের বর্ণিতা হাজরাও সপ্তম হয়েছেন। মাধ্যমিকে ৩ নম্বর কম থাকায় মেধা তালিকায় আসতে পারেননি। সেই আফশোস ঘুচে গেল উচ্চ মাধ্যমিকে। তিনিও চিকিৎসক হতে চান। পাঁশকুড়ার রঘুনাথবাড়ি রামতারক হাইস্কুলের তিস্তা বেরা ৪৯০ নম্বর পেয়ে রাজ্যে অষ্টম হয়েছেন। তাঁর বাড়ি পাঁশকুড়া পুরসভার মধুসূদনবাড় এলাকায়। তিনি পাঁশকুড়া গার্লস হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিকে অষ্টম হয়েছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকেও একই পজিশন ধরে রেখেছেন। তাঁর বাবা চন্দনকুমার বেরা রঘুনাথবাড়ি রামতারক হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষক। বড় হয়ে তিস্তা চিকিৎসক হতে চান। কাঁথির কিশোরনগর শচীন্দ্র শিক্ষাসদনের বিপ্রদীপ জানা ৪৮৯নম্বর পেয়ে দশম হয়েছেন। কাঁথির জালালখাঁবাড়ের বিপ্রদীপের ২ নম্বরের জন্য মাধ্যমিকের র্যাঙ্ক হাতছাড়া হয়েছিল। তাঁরও সেই আক্ষেপ মিটেছে। তিনিও চিকিৎসক হতে চান। মহিষাদলের তাজপুর হাইস্কুলের অদ্রিজা জানা ৪৮৯নম্বর পেয়ে নবম হয়েছেন। বড় হয়ে তিনি চিকিৎসক হতে চান।
পশ্চিম মেদিনীপুরের তিন পড়ুয়া উচ্চ মাধ্যমিকে মেধা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবনের বীরেশ ঘোষ ৪৯৩নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হয়েছেন। তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় দশম হয়েছিলেন। তাঁর বাড়ি মেদিনীপুর শহরের পালবাড়িতে। বাবা গৌতম ঘোষ পেশায় শিক্ষক। কোনও টিউশনি ছাড়াই বীরেশ এই সাফল্য পেয়েছেন। বড় হয়ে বীরেশ ইঞ্জিনিয়ার হতে চান।
মেদিনীপুর কলিজিয়েট স্কুলের পড়ুয়া সৌম্যসুন্দর রায় ৪৮৯নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় নবম স্থান দখল করেছেন। রেজাল্ট রিভিউয়ের পর মাধ্যমিকেও তিনি সপ্তম স্থান দখল করেছিলেন। ওই কৃতী পড়ুয়া ভবিষ্যতে গবেষণা করতে চান। মেধা তালিকায় দশম স্থান অধিকার করেছেন সাগ্নিক পাত্র। মেদিনীপুর কলিজিয়েট স্কুলের ছাত্র সাগ্নিকের প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৮। ভবিষ্যতে তিনি ইঞ্জিনিয়ার হতে চান।
ঝাড়গ্রামের কুমুদকুমারী ইন্সটিটিউশনের সৌরভ বেরা মেধা তালিকায় নবম স্থান অধিকার করেছেন। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৯। সৌরভের বাড়ি জামবনী ব্লকের প্রত্যন্ত বেলিয়া গ্ৰামে। ভবিষ্যতে তিনি চিকিৎসক হতে চান। তাঁর বাবা উত্তম বেরা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। আর্থিক প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওই কৃতী পড়ুয়া জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন।
রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের(একলব্য রেসিডেন্সিয়াল মডেল)এর ছাত্রী মিনতি হেমব্রম সাঁওতালি মাধ্যমে ৪৭৩ নম্বর পেয়ে রাজ্যে প্রথম হয়েছেন। তাঁর বাড়ি গোপীবল্লভপুর ব্লকের কাঁদনাশোল গ্ৰামে। বাবা মারা গিয়েছেন। মা চাষবাস করে সংসার চালান। পড়াশোনার পাশাপাশি মিনতি ফুটবল খেলাতেও পারদর্শী।