নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: মাধ্যমিকের ফলাফল হতাশ করেছিল ঝাড়গ্রাম জেলার শিক্ষানুরাগী মহলকে। উচ্চমাধ্যমিকের ফল সে হতাশা কাটিয়ে দিল। এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে জেলা থেকে এক ছাত্র নবম স্থান অধিকার করেছে আর এক ছাত্রী সাঁওতালি মাধ্যমে প্রথম হয়েছে। উচ্ছ্বসিত জেলার সাধারণ মানুষও। ঝাড়গ্ৰাম অশোক বিদ্যাপীঠের সহ শিক্ষক নীলকণ্ঠ নায়েক বলেন, মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় জেলার ছাত্র ছাত্রীদের স্থান না পাওয়া নিঃসন্দেহে হতাশাজনক ছিল। উচ্চমাধ্যমিকে সৌরভ বেরা ও মিনতি হেমব্রমের সাফল্যে আমরা গর্বিত।
৪৮৯ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় নবম স্থান পেয়ে চমকে দিয়েছে জামবনী ব্লকের বেলিয়া গ্রামের সৌরভ। সৌরভের বাবা উত্তম বেরা রাজমিস্ত্রি। সংসারে অনটন নিত্যসঙ্গী। সেই চূড়ান্ত অভাবের মধ্যেই সৌরভের এই ফল নিঃসন্দেহে বড় চমক। উত্তম বেরা বলেন, কষ্ট করে ছেলেকে বড় করে তুলেছি। পড়াশোনার জন্য ছেলেকে কোনওদিন কিছু বলতে হয়নি। মন দিয়ে পড়াশোনা করত। এখন চাইছি ও নিজের স্বপ্নপূরণ করুক। সৌরভ বলেন, পরীক্ষা ভালো দিয়েছিলাম। মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ার আশা ছিলই। সেই আশা বাস্তবায়িত হওয়ায় খুব ভালো লাগছে। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চাই। তারজন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। সৌরভ ঝাড়গ্রাম কুমুদ কুমারী ইনস্টিটিউশনের ছাত্র। এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা দেশ বিদেশের নান প্রান্তে আজ প্রতিষ্ঠিত। অভিভাবকরা নিজেদের ছেলেমেয়েদের এই স্কুলে ভর্তি করার চেষ্টা করেন। মাধ্যমিক ২০২৫ সালের মেধা তালিকায় কোনও ছাত্র স্থান না পাওয়ার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলের আশা প্রকাশ করেছিল। সেই আশা পূরণ হল। এ বছর ১৮৪ জন পড়ুয়া উচ্চমাধ্যমিকে বসেছিল। সকলেই উত্তীর্ণ হয়েছে। আশি শতাংশের উপর নম্বর পেয়েছে ১০০ জন। সৌরভ বেরা রাজ্যে নবম হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত বলেন, উচ্চমাধ্যমিকে আমাদের স্কুল প্রত্যাশা মতো ভালো ফল করেছে। সৌরভ আর্থিক বাধা কাটিয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে, যা দৃষ্টান্তমূলক। সৌরভের বাড়িতে বাবা-মা ও ছোট বোন আছে। বাবা উত্তম বেরা এদিন স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে কলকাতায় গিয়েছিলেন। সেখানেই ছেলের নবম হওয়ার কথা জানতে পারেন।
জেলার আর এক কৃতী মিনতি হেমব্রমও গরিব পরিবারের সন্তান। বাবাকে হারিয়েছেন। তাঁর মা চাষাবাদ করে মেয়েকে বড় করে তুলেছেন। ক্লাস সিক্স থেকেই মিনতি রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির একলব্য রেসিডেনশিয়াল মডেল স্কুলের হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছেন। এ বছর সাঁওতালি মাধ্যমে রাজ্যে প্রথম হয়েছেন। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৩। মিনতির মা সলমা হেমব্রম বলেন, মেয়েকে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে বলতাম। ও সফল হওয়ায় আমি খুশি। ওই স্কুলের টিচার ইন চার্জ অক্ষয়কুমার মাইতি বলেন, মিনতির কাঁধে পরিবারে দায়িত্ব পড়েছে। ও আমেদাবাদে একটা ট্রেনিং সেন্টারে কাজে যোগ দেবে। কাজের সঙ্গেই উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাবে।