ভারত-পাক যুদ্ধ আবহে ফের চর্চায় নিঘা এয়ারোড্রাম, উচ্ছেদের শঙ্কায় দখলদাররা
বর্তমান | ০৮ মে ২০২৫
সুমন তেওয়ারি, জামুড়িয়া: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল আসানসোল এয়ারফিল্ড। এলাকায় নিঘা এয়ারোড্রাম নামে সমধিক পরিচিত। ১৯৪৩-৪৪ সালে রানওয়ে দিয়ে ফুরুৎ করে উড়ে যেত একের এর এক আমেরিকা ও ব্রিটেনের যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার। পেটে ভর্তি থাকত গোলা-বারুদ সহ নানা অস্ত্র সম্ভার। ১৯৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধের সময়েও এয়ারোড্রামটিকে নতুন করে সাজিয়ে তুলেছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনী। যাতে যুদ্ধের প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেভাবে আর কাজে লাগায়নি বাহিনী।
মুক্তিযুদ্ধের পর পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় পাঁচ দশক। দামোদর দিয়ে গড়িয়ে গিয়েছে বহু জল। অবহেলায় পড়ে থেকেছে এয়ারোড্রামটি। নজর ছিল না সেনাবাহিনীরও। সেই সুযোগ হাতছাড়া করেনি শিল্পাঞ্চলের হাঙররা। একটু একটু করে নির্বিচারে লুট করা হয়েছে সেনাবাহিনীর অধীনে থাকা শিল্পাঞ্চলের জমি। দিনে দুপুরের দখল হয়ে গিয়েছে বিঘার পর বিঘা জমি। পুলিস ও প্রশাসন নির্বিকার। জামুড়িয়া থানার শ্রীপুর ফাঁড়ির অন্তর্গত ওই এয়ারোড্রামের জমিতে ধাবা, হোটেল, গাড়ি পার্কিং থেকে শুরু করে খাটাল এমনকী গজিয়ে উঠেছে বিভিন্ন লোহার সামগ্রী তৈরির ওয়ার্কশপও। প্রথমে জাতীয় সড়কের সামনের অংশ দখল করে ব্যবসা শুরু হয়। এখন যত দিন যাচ্ছে ভেতরের অংশে রাস্তা তৈরি করে প্রাচীর দিয়ে দখল করা হচ্ছে। দখলকারীদের ভাবখানা অনেকটা ‘জোর যার মুলুক তার’-এর মতো!
বর্তমানে পেহেলগাঁওয়ে জঙ্গিদের হত্যালীলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে। মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে ন’জায়গায় আঘাত করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। তাকে ঘিরে দু’দেশর মধ্যে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি। সত্যিই যুদ্ধ বেঁধে যায়, তা হলে কি সেনারা ফের এয়ারোড্রামটিকে পুনর্গঠন করবে? কেননা, যুদ্ধক্ষেত্রে ভৌগোলিক কৌশলগত দিয়ে নিঘা অঞ্চলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে, এয়ারোড্রামটিকে সেনাবাহিনী কাজে তৎপর হতে পারে। এমন সম্ভাবনা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হতেই ঘুম উড়েছে দখলদারদের। চাপে পড়ে তারা এখন বলছে, বাহিনী এলে আমরা সরে যাব। অন্যদিকে, এলাকার মানুষ সেনা বাহিনীর এই জমি লুট দেখে বিরক্ত। তাঁরা চাইছেন, বিপুল জমির সদ্ব্যবহার হোক। পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিশ্বনাথ বাউরির বাড়ি এয়ারোড্রামের অদূরে রতিবাটি গ্রামে। তিনি বলছিলেন, ‘ব্রিটিশরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এটি গড়ে তুলেছিল। পরবর্তীকালে ৭১ যুদ্ধের সময়ে সেনা তৎপরতা আমরা দেখেছিলাম। এয়ারোড্রামটি যেভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে, তাকে সমর্থন করি না। যদিও জমিটির অল্প অংশ নিয়ে কিছু মানুষ মামলা করেছেন। তাঁদের দাবি, দাম না দিয়েই জমি নিয়েছিল ব্রিটিশরা।’
১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বুদবুদ থেকে পানাগড় পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সেনা ছাউনি। পানাগড়ে রয়েছে এয়ার ফোর্সের ঘাঁটিও। একই ভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর সময় থেকেই জাতীয় সড়কের চাঁদা মোড় থেকে কালীপাহাড়ি মোড় পর্যন্ত রাস্তা দক্ষিণ দিকে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে যে জমি রয়েছে তা আসলে নিঘা এয়ারোড্রাম। একটা সময়ে সেখানেই ছিল রানওয়ে, ভূগর্ভস্থ বাড়ি। সে সব আজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি। সম্প্রতি আবার দেখা যাচ্ছে, গুঞ্জন পার্ক (যেটি আসানসোল দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারেটের অধীন) সংলগ্নও নির্বিচারে জমি লুট চলছে। জমি সমান্তরাল করে প্লটিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় জামুড়িয়া নিঘার বাসিন্দারা চাইছেন, এলাকাটি উপর নজর দিক সরকার। জামুড়িয়ার নিঘা এয়ারোড্রামে চলছে নির্বিচারে জমি দখল। নিজস্ব চিত্র