বহাল তবিয়তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাইরেন, নেতাজির জন্মদিনে ফি বছর বাজে মলঙ্গা লেনে
বর্তমান | ০৮ মে ২০২৫
অলকাভ নিয়োগী, বিধাননগর: ১৯৪২ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। হঠাৎ কলকাতার রাস্তায় বেজে উঠল সাইরেন! নিরাপদ জায়গায় পৌঁছতে দিগভ্রান্ত হয়ে দৌঁড়চ্ছেন মানুষজন। আকাশে যুদ্ধ বিমানের ভয়ঙ্কর গর্জন। বোমাবর্ষণ করতে আসছে জাপানি বিমান। শহরের আনাচেকানাচে আজ ছড়িয়ে রয়েছে সেই মহাযুদ্ধের ইতিহাস। প্রায় ৮৩ বছর পরেও কলকাতায় বিপ্লবী অনুকূল মুখোপাধ্যায়ের পরিবারে বহাল তবিয়তেই রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত সেই সাইরেন! শুধু তাই নয়, ফি বছর ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিনে মলঙ্গা লেনে বাজানো হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সাইরেন।
১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত চলেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সেই সময় এই সাইরেন বাজিয়েই নাগরিকদের সতর্ক করা হতো। ১৯৪২ সালের ২০ ডিসেম্বর কলকাতায় বোমাবর্ষণ করছিল ইম্পেরিয়াল জাপানি আর্মি এয়ারফোর্সের বিমান। ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বোমা ফেলা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার দু’বছর পরেই দেশ স্বাধীন হয়। ভারতবর্ষ ছাড়তে বাধ্য হয় ব্রিটিশ শাসকরা। পহেলগাঁওতে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদী হামলার বদলা নিয়েছে ভারত। পাকিস্তানে ঢুকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে জঙ্গিদের ঘাঁটি। যুদ্ধকালীন সতর্কতা নিয়ে নাগরিকদের সচেতন করতে দেশজুড়ে মক ড্রিলও হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে বাজানো হয়েছে সাইরেন। যুদ্ধের সাইরেন! এই আবহে শহরবাসীর চর্চায় আরও একবার ফিরে এসেছে মলঙ্গা লেনের সাইরেন।
ওয়েলিংটন স্কোয়ার সংলগ্ন ৩৯, মলঙ্গা লেনেই ছিল বিপ্লবী অনুকূল মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি। রডা কোম্পানির আগ্নেয়াস্ত্র লুটে তিনি ছিলেন অন্যতম যোদ্ধা। তাঁর নেতৃত্বে এই মলঙ্গা লেনে অস্ত্র লুকনোর ব্যবস্থা হয়েছিল। বিপ্লবী অনুকূলবাবুর ভাইপো গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায় একটি সাইরেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগ্রহ করেছিলেন। নেতাজির ভাবধারায় উদ্বুব্ধ হয়ে গোপালবাবু ১৯৪৫ সালে ‘জাতীয় আর্ত্তত্রাণ সমিতি’ প্রতিষ্ঠা করেন। বাড়ির পাশে এখনও সমিতির অফিস রয়েছে। সেখানেই রাখা আছে ওই সাইরেন। গোপালবাবুর নাতি শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওই সাইরেন আমার দাদু সংগ্রহ করেছিলেন। জাতীয় আর্ত্তত্রাণ সমিতির আয়োজনে ১৯৪৫ সাল থেকেই নেতাজির জন্মদিন পালন করা হচ্ছে। ’৪৫-এ যখন প্রথম নেতাজির জন্মদিন পালন হয়েছিল, তখন তিনি পুরোদস্তুর লড়াইয়ের ময়দানে। তখন থেকেই নেতাজির জন্মদিনে এই সাইরেন বাজানো হয়। শান্তনুবাবু বলেন, ‘কলকাতার মেয়র থাকাকালীন নেতাজি বিপ্লবী অনুকুল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমাদের বাড়িতে অনেকবার এসেছেন। নেতাজিই ছিল তাঁর আদর্শ। তাই ২৩ জানুয়ারি এখানে আজাদ হিন্দের পতাকাও তোলা হয়। এখানে সাইরেনের শব্দে আতঙ্ক নেই। তখন নেতাজির কাছে এসে মাথা নত করেন সকলে।’