• এটা দেশকে রক্ষা করার সময়: মুখ্যমন্ত্রী
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৮ মে ২০২৫
  • পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যাঘাতের পর বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ভার্চুয়ালে জরুরি বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রশাসনিক কর্তারা। আর সেই বৈঠকের প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী দেশের এই জরুরি পরিস্থিতিতে সমস্ত রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বার্তা দিলেন।

    ভারত-পাকিস্তানের ঠান্ডা যুদ্ধের আবহে রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এদিন বলেন, ‘এটা দেশকে রক্ষা করার সময়, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করব’। বাংলা সীমান্তবর্তী রাজ্য হওয়ায়, সুরক্ষায় বাড়তি তৎপর রাজ্য প্রশাসন। সেই কারণেই জরুরি পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক আধিকারিকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

    প্রসঙ্গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে পেহেলেগাঁও-কাণ্ডের বদলা নিতে ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’ বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে। বহু প্রতীক্ষিত এই প্রত্যাঘাতের পরই জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুখ্যমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডলে লিখেছিলেন, ‘জয় হিন্দ, জয় ভারত।’ এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিভিন্ন সীমান্তবর্তী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরপরই বুধবার মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যবাসীকে সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, সরকারি নির্দেশিকা আমরা দেখেছি। এই পরিস্থিতিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করব। আমরা সবাই দেশের পক্ষে, এই মানসিকতা নিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঘোষিত লড়াইয়ে কেন্দ্রের পাশে আমরা রয়েছি।’

    এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর উপদেশ, ‘কারও প্ররোচনায় পা দেবেন না। সমাজমাধ্যম থেকে টেলিভিশনে প্ররোচনামূলক পোস্ট বা অনুষ্ঠান হলে তৎক্ষণাৎ তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বৈঠকে। এটা প্ররোচিত করার সময় নয়। দেশকে রক্ষা করার সময়। সাধারণ নাগরিক হিসাবে নিজ দায়বদ্ধতার সঙ্গে যাঁরা দেশের জন্য মাটিতে থেকে লড়াই করছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ান।’

    এই আবহে রাজ্য প্রশাসন কতটা তৎপর, তার খতিয়ান তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কোথায় কী সমস্যা হতে পারে সেটি সাধারণ মানুষের দেখার বিষয় নয়। সেই জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক দপ্তর রয়েছে। তাছাড়াও আমাদের বিপর্যয় মোকাবিলা দল, রাজ্য পুলিশ সর্বদা তৎপর। জেলাশাসক, বিডিও থেকে পুলিশ সুপার, থানার আইসি সকলকেই সতর্ক করা হয়েছে। তাঁদের মোবিলিটি এবং ভিজিলেন্সও বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে সমস্ত ছুটি বাতিল করা হয়েছে।’

    উল্লেখ্য, এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠকের পরই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক আধিকারিক এবং রাজ্যের দপ্তরগুলির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, ডিজি রাজীব কুমার, কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা-সহ প্রমুখরা।

    দেশপ্রেম ও সহযোগিতার মনোভাব প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘আমরা দেশকে ভালোবাসি। বাংলা চিরকাল দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, স্বাধীনতা দিয়েছে। তাই আমাদের নৈতিক দায়িত্ব কোনোরকম ভয় না পেয়ে এবং প্যানিক না করে সবটা আগলে রাখা। বিভেদ না করে একত্রিত থাকুন। যদি কখনও সাইরেন বাজে, নির্দিষ্ট নির্দেশিকা অনুসরণ করুন।’

    সেই সঙ্গে এই জরুরি পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলিতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি দেওয়ার আবেদন করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এর জন্য পৃথকভাবে কোনো লিখিত নোটিশ পাঠাচ্ছি না। প্রাইভেট স্কুলগুলির কাছে অনুরোধ, রবীন্দ্র জয়ন্তী থেকে ছুটি দিয়ে দিলে খুব ভালো হয়। ছাত্রছাত্রীরা এই সময় বাড়িতেই পড়াশোনা করুক।’ পাশাপাশি বৃহস্পতিবার কৃষি বিপণন নিয়ে বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে মূল্যবৃদ্ধির মতো সমস্যা প্রতিরোধ করতেও তৎপর হয়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)