এই সময়, বালুরঘাট: তাঁর বিয়ের কথা জানেন না তিনি নিজেই। জানেন না, তাঁর পরিবারের সদস্যরাও। অথচ, সরকারি খাতায় তিনি নাকি বিবাহিত। যার জেরে কন্যাশ্রীর টাকা ঢোকেনি তাঁর অ্যাকাউন্টে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া সদ্য ১৮–তে পা দেওয়া এক ছাত্রীর ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটেছে। কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা পেতে তাঁর বাবা তদ্বির করতে বিষয়টি সামনে আসে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের অশোকগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের উধুরা প্রাণনাথপুর এলাকার দুঃস্থ কৃষক পরিবারের মেয়ে রোজিনা খাতুন। এ বছর অশোকগ্রাম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন।
কন্যাশ্রী প্রকল্পে কোনও ছাত্রীর বয়স ১৮ বছর হলে সেই সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলে এবং বিয়ে না হলে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। রোজিনার বাবা হাফিজুর মিঁয়া বুধবার গঙ্গারামপুর বিডিও অফিসে কন্যাশ্রীর টাকার ব্যাপারে খোঁজ নিতে যান।
কিন্তু সেখানে সমাজকল্যাণ দপ্তরের এক কর্মী তাঁকে জানান, আপনার মেয়ে বিবাহিত, তাই প্রকল্পের তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এ কথা শুনে চমকে যান তিনি।
হাফিজুর বলেন, ‘আপনারা ভুল করছেন। আমার মেয়ের বিয়ে হয়নি।’ কিন্তু অভিযোগ, ওই কর্মী কোনও কথাই শুনতে চাননি। ফিরে এসে মেয়ের স্কুলে বিষয়টি জানান তিনি। স্কুলের শিক্ষক কামালদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ওই ছাত্রীর তো বিয়ে হয়নি। কে এমন রিপোর্ট দিল?’
বিষয়টি নিয়ে স্কুলের পক্ষ থেকে সমাজকল্যাণ দপ্তরে কথা বলা হবে বলে জানান তিনি। রোজিনা বলেন, ‘সবে ১৮–তে পা দিয়েছি। কন্যাশ্রীর টাকা আমার স্কুলের সকলেই পেয়েছে। কিন্তু আমি পাইনি। খোঁজ নিলে জানতে পারি আমার নাকি বিয়ে হয়ে গিয়েছে।’ হাফিজুর মজা করে বলেন, ‘আমি মেয়ের বিয়ে না দিলেও প্রশাসন খাতায় কলমে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে অশোকগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান বজিরুদ্দিন মিঁয়া বলেন, ‘অফিসে বসে কাজ করলে প্রকৃত গরিব পরিবারের মেয়েরা সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হবে। প্রশাসনের বিষয়টা দেখা উচিত।’ গঙ্গারামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিউটি বর্মন সরকার বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই। লিখিত অভিযোগ করলে যথাস্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’ গঙ্গারামপুরের বিডিও অর্পিতা ঘোষাল বলেন, ‘কোথায় সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’