দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া
জীবনের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল বড়সড় এক ঝড়। দিদির দেওয়া যকৃতের অংশে নতুন জীবন পেয়েছিল পাঁশকুড়ার দিশা সামন্ত। জীবন যুদ্ধে আগেই মিলেছিল সাফল্য। তবে শারীরিক অসুস্থতাকে সঙ্গী করেই উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছিল দিশা। ৭২ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়ে পাশ করল দিশা। কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় এই লড়াকু ছাত্রী।
পাঁশকুড়ার মঙ্গলদ্বারি গ্রামে বাড়ি দিশার। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দিশার যকৃতের সমস্যা ধরা পড়ে। দিশা তখন পাঁশকুড়া গার্লস হাইস্কুলের অষ্টমের ছাত্রী। চিকিৎসার জন্য ওই বছর মার্চে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে দিশাকে দিল্লির একটি নামকরা বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউয়ে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসকেরা জানান, যকৃৎ বা লিভার প্রতিস্থাপন করা ছাড়া দিশাকে বাঁচানোর আর কোনও রাস্তা নেই। বোনকে বাঁচাতে দিল্লি রওনা দেন দিশার দিদি লিসা। লিসা তখন পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তত দিনে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে কোভিড লকডাউন। বোনকে যকৃতের অংশ দেওয়ার আগেই কোভিড আক্রান্ত হন লিসা। লিসাকে দিল্লির একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ দিকে ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে দিশার। লিসা কোভিডমুক্ত হতেই শুরু হয় যকৃৎ প্রতিস্থাপনের তোড়জোড়। ২০২০ সালের ২০ মে–তে লিসার যকৃতের ৬০ শতাংশ বোন দিশার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।
ঝুঁকিপূর্ণ সফল যকৃৎ প্রতিস্থাপন শেষে ওই বছর ২১ জুলাই বাড়ি ফিরে আসে দিশা। তারপর দফায় দফায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তা সত্ত্বেও মনের জোরকে সঙ্গী করে পড়াশোনা চালিয়ে যায় দিশা। মাধ্যমিকের পর ভর্তি হয় সায়েন্স নিয়ে। এ বার সে উচ্চমাধ্যমিক দেয়। ৩৬১ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে দিশা।
যদিও আরও ভালো নম্বর আশা করেছিল দিশা। রিভিউয়ের জন্য আবেদন করতে চায় সে। দিশা বলে, ‘একটা সময় শরীরের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে বেঁচে থাকাটাই ছিল চ্যালেঞ্জ। দিদির লিভারের অংশ না পেলে আজ আমি পৃথিবীতে থাকতাম না। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলাম। এই রেজ়াল্টে আমি খুশি নই। তিনটি বিষয়ে খুব কম নম্বর এসেছে। রিভিউয়ের জন্য আবেদন করব। কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করতে চাই।’
দিশার বাবা অসীমকুমার সামন্ত বলেন, ‘দিশার ভালো থাকাটা আমাদের কাছে সবার আগে। তারপর পড়াশোনা। এত বড় শারীরিক সমস্যা নিয়েও ও উচ্চমাধ্যমিকে সফল হয়েছে, এটা আমাদের কাছে বাড়তি পাওনা। আমরা খুব খুশি।’ বোনের সাফল্যে দিদি লিসা বলেন, ‘জীবন যুদ্ধে দিশা যে লড়াইটা দিয়েছে সেটা সবার কাছে অনুপ্রেরণার। এত বড় শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা সহজ কথা নয়। ওর এই সাফল্যে আমি খুব খুশি।’