• আনিসুরের চেষ্টায় পথ খুঁজে পেয়েছেন কয়েকশো মহিলা
    এই সময় | ০৮ মে ২০২৫
  • বিশ্বরূপ বিশ্বাস, চোপড়া

    স্বপ্ন ফেরি করার নেশাটা চেপেছিল বেকার অবস্থায়। চাকরি পেয়ে সেটা আরও বেড়ে যায় উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার ঘিরনিগাঁওয়ের আনিসুর রহমানের। দেড় দশক ধরে হাজারেরও বেশি মহিলাকে বিভিন্ন উপায়ে আয়ের পথ দেখিয়েছেন তিনি।

    কখনও সেলাই শিখিয়ে, কখনও আবার ধূপকাঠি, মাশরুম চাষ বা বিভিন্ন ধরনের গয়না তৈরির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর প্রশিক্ষণ নিয়ে জীবিকা নির্বাহের পথ খুঁজে নিয়েছেন গ্রামের কয়েকশো মহিলা।

    আনিসুর মনে করেন, ‘মহিলারা আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হলে তাঁরা সমাজে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।’ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম আনিসুরের। শিক্ষা বা নানা সামাজিক ক্ষেত্রে গ্রামের মহিলাদের নান ভাবে বঞ্চিত হতে দেখেছেন সেই ছোট থেকেই। তখন থেকেই স্বপ্ন বোনা শুরু।

    বেকার থাকা অবস্থায় যা পারেননি, সরকারি চাকরি পেয়ে, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি। আনিসুরের কথায়, ‘ছোট থেকেই ঠিক করেছিলাম, এলাকার পিছিয়ে পড়া মহিলাদের জন্য কিছু একটা করব। তবে এখন শুধু ব্লকেই থেমে থাকতে চাই না, দেশ-বিদেশেও পিছিয়ে পড়া মহিলা ও শিশুদের জন্য ভালো কিছু করতে চাই।’

    যাত্রা শুরু হয় ২০০৯ সালে। তখন কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে শুরু করেন প্রশিক্ষণ। ২০১০-এ শিক্ষক হয়ে ঢোকেন কাঁঠালডাঙি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মহিলাদের সংখ্যা। তবে স্কুলের সামান্য বেতন থেকে গরিব মহিলাদের সাহায্য সে ভাবে করতে পারতেন না। ফের চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তিনি। এ বার লক্ষ্য মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন।

    ২০১৪ সালে জলপাইগুড়ির সুকানি ভোলাপাড়া হাই মাদ্রাসায় গ্রন্থাগারিক পদে যোগ দেন তিনি। কিন্তু জলপাইগুড়ি থেকে কী ভাবে এলাকার মহিলাদের জন্য কাজ করবেন? অনেক ভেবে চোপড়া ব্লকের যুবক–যুবতীদের নিয়ে খুলে ফেলেন দাসপাড়া নবদিশা এডুকেশন অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। আনিসুর বাইরে থাকলেও চাপ নেই। সংস্থার সদস্যরাই সবটা দেখভাল করে।

    চোপড়া ব্লকের বাসিন্দা শ্রীমতি দাস বলেন, ‘আনিসুরদা সাহস জুগিয়ে আমকে প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে আমি মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিই। এখন নিজেই একজন কৃষক। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মহিলাদের মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণও দিই।’

    অতিমারী সময়ে বেতনের টাকায় খুলেছিলেন লঙ্গরখানা। এলাকার অনাথ ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য এখন তৈরি করেছেন ‘শিক্ষা আশ্রয়’ নামে একটি পাঠশালা। কেন করেন এ সব? আনিসুর বলেন, ‘অন্যের জন্য কিছু করলে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। মনভার, দুঃখ থাকে না। যেন সাগর সৈকতের শুদ্ধ বাতাস।’

  • Link to this news (এই সময়)