• কারও ছুটি বাতিল, কেউ ডিউটিতে! সন্তানদের সাফল্যেও পাশে থাকতে পারলেন না দুই কৃতীর বাবারা
    প্রতিদিন | ০৮ মে ২০২৫
  • টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: উচ্চ মাধ্যমিকে যুগ্মভাবে অষ্টম তাঁরা। দু’জনই হতে চান  চিকিৎসক। দুই কৃতীর ছাত্রের বাবাই যুক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে। বাবার সান্নিধ্য পাননি তাঁরা। সাফল্যের দিনে সেইভাবে কাছে পেলেন না বাবাদের। বাঁকুড়া থেকে অষ্টম স্থান পাওয়া দেবজিৎ রায়ের বাবা সিআরপিএফ জওয়ান চিন্তাহরণ রায়। ঋতম মান্নার বাবা বারিকুল থানার সাব ইন্সপেক্টর মঙ্গল মান্না। পরিবার যখন আনন্দে মেতেছে তখন বাবার সঙ্গ অধরাই থেকেছে ঋতমের। দেশের কঠিন সময়ে ছুটি বাতিলের বার্তা আসার পরই ফের হাতে বন্দুক তুলে নিয়েছেন দেবজিতের বাবা।

    বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল হীড়বাঁধ ব্লকের মশিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা চিন্তাহরণ রায়। ২৫ বছর ধরে সিআরপিএফে কর্মরত। দুই ছেলের পড়াশোনার জন্য বাঁকুড়া শহরের নতুন চটি এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন দেবজিতের মা সুজাতা রায়। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র ও তেলেঙ্গানা সীমানা ঘেঁষা পাহাড় ও জঙ্গলে সবথেকে বড় অভিযানে ছিলেন চিন্তাহরণবাবু।

    গত কয়েক মাস ধরে চলা এই অভিযানের পর, ছুটি নিয়ে সদ্য বাড়ি ফিরেছিলেন। বুধবার খবর আসে মাওবাদী দমনে বড় সাফল্য এসেছে নিরাপত্তা বাহিনীর ঝুলিতে। ২৬ মাওবাদী সদস্যকে নিকেষ করা গিয়েছে। বাহিনীর ও সহকর্মীদের সেই সাফল্যে নিজেও গর্ব বোধ করছেন, সেই সময়ই আরও একটি সুখবর। কাঁধ চওড়া করছেন ছেলে দেবেজিৎ। এই জোড়া খুশির মাঝে কিছুটা দুঃখ পরিবারে। পাকিস্তান ও ভারতের যুদ্ধ আবহে ছুটি বাতিল হয়েছে চিন্তাহরণবাবুর। ফিরে যেতে হবে কর্মস্থলে। তবে তিনি খুশি।

    অন্যদিকে, দেবজিতের মতো অষ্টম স্থান ছিনিয়ে আনা ঋতম মান্নাও বাবার সান্নিধ্য সেইভাবে পাননি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছেলের সাফল্যের খবর পেয়েও কর্তব্যে অবিচল ছিলেন বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের বারিকুল থানার সাব ইন্সপেক্টর মঙ্গল মান্না। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি ব্লকের বাসিন্দা মঙ্গলবাবু চাকরিসূত্রে দীর্ঘদিন ধরে বাঁকুড়াতে থাকেন। বাঁকুড়া পুলিশ লাইনের সরকারি আবাসনে একমাত্র ছেলে ঋতমকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর স্ত্রী তাপসী মান্না। বুধবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশের পর সমস্ত বন্ধু-বান্ধবদের অভিভাবকরা যখন সপরিবারে আনন্দে মেতেছেন তখন, বাবার সঙ্গ অধরাই থেকেছে বাঁকুড়া জেলা স্কুলের ছাত্র ঋতমের।

    পুলিশকর্মী হওয়ায় ছেলেকে পর্যাপ্ত সময় দিতে না পারলেও কঠোর পরিশ্রম ও সততার পাঠ দিয়েছেন মঙ্গলবাবু। দুই পরিবারের কর্তারা জনসাধারণের নিরাপত্তায় নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন। পরিবার সামলেছেন স্ত্রীরা। তাঁদের সন্তানরা রাজ্যস্তরে সাফল্য পাওয়ায় খুশি বাঁকুড়াবাসীও।
  • Link to this news (প্রতিদিন)