• আক্রমণ হতে পারে ‘চিকেনস নেকে’! আতঙ্কে পর্যটকরা উত্তরবঙ্গ ছাড়ায় চিন্তায় ব্যবসায়ীরা
    প্রতিদিন | ০৮ মে ২০২৫
  • বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor) অভিযানে উচ্ছ্বসিত সব্বাই। কিন্তু এর জেরেই ভরা মরশুমে ধাক্কা খেতে শুরু করল উত্তরের পর্যটন ব্যবসা। ‘চিকেনস নেকে’র পরিস্থিতি জানতে বিদেশি পর্যটকদের দিনভর ফোন রাজ্য ইকো ট্যুরিজম কমিটি এবং ট্যুর অপারেটরদের। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পর্যটকরাও ভ্রমণ সূচি কাটছাঁট করে বাসে-ট্রেনে ফিরতে শুরু করলেন বাড়িতে। পাহাড়ের হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের শঙ্কা, দিন কয়েকের মধ্যে বুকিং বাতিলের হিড়িক শুরু হতে পারে। কার্যত এদিন থেকে নতুন বুকিং বন্ধ হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা। কারণ, পহেলগাঁও হামলার পর জোর ধাক্কা খেয়েছে কাশ্মীরের পর্যটন শিল্প। রাতারাতি ঘরে ফিরেছেন পর্যটকরা। বহু বুকিং বাতিল হয়েছে। একই পরিস্থিতি হবে না তো উত্তরবঙ্গের? শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা।

    দেশি-বিদেশি পর্যটকদের যত ভয় জুড়ে বসেছে ‘চিকেনস নেক’ ঘিরে। এবার ওই ‘চিকেনস নেক’ অথবা শিলিগুড়ি করিডর আক্রমণ হতে পারে, এমনই শঙ্কা পর্যটকদের একাংশের। সেটা ঘিরে রয়েছে চিন, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ। এখানে প্রচুর সেনা মোতায়েন করে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ও এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র আনা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে থমথমে পরিবেশ সিকিম থেকে ডুয়ার্স ও দার্জিলিংয়ে। হোটেল, রেস্তোরাঁ থেকে বাজার প্রত্যেকের চোখ বারবার বন্দি হয়েছে মোবাইল ফোন অথবা টিভি স্ক্রিনে ভেসে ওঠা যুদ্ধ পরিস্থিতির খবরে। ওই অবস্থায় পর্যটকদের অনেকেই ঝুঁকি না নিয়ে ভ্রমণ সুচি কাটছাঁট করে তড়িঘড়ি পাহাড় থেকে নেমে বাসের টিকিট জোগাড় করে রওনা হয়েছেন বাড়ির পথে। যেমন, দমদমের নাগেরবাজার এলাকার বাসিন্দা সৌমেন দাস। রবিবার সাতদিনের সিকিম ভ্রমণে সপরিবারে গ্যাংটকে পৌঁছে যান তিনি। সোমবার না-থুলা পাস, ছাঙ্গু উপত্যকায় যান। মঙ্গলবার গ্যাংটক শহর ভ্রমণ করেছেন। বুধবার যাওয়ার কথা উত্তর সিকিমে। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে যুদ্ধের খবর মিলতে সূচি কাটছাঁট করে নিচে নেমে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসে দাঁড়িয়ে সৌমেনবাবু বলেন, “এই মুহূর্তে সিকিম, শিলিগুড়ি খুবই স্পর্শকাতর জায়গা। চিকেনস নেক বলে কথা। আটকে গেলে বিপদে পড়ে যাব। তাই রবিবার ট্রেনের টিকিট বাতিল করে বাসের টিকিট জোগাড় করেছি।”

    শুধু সৌমেনবাবু কেন? একই উদ্বেগ অনেকেরই চোখেমুখে। রাজ্য ইকো ট্যুরিজম কমিটির চেয়ারম্যান রাজ বসু বলেন, “দিনভর বিদেশি পর্যটকদের ফোন এসেছে। প্রত্যেকে ‘চিকেনস নেক’ এলাকার পরিস্থিতি জানতে চেয়েছেন। ওদের অনেকেরই দার্জিলিং ও সিকিম ভ্রমণের ইচ্ছে। কিন্তু আশ্বস্ত করলেও ওরা ঝুঁকি নিতে চাইছে না।” পরিস্থিতি মোটেও ভালো নয় বলে মনে করছেন দার্জিলিং হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয় খান্না। তিনি বলেন, “যুদ্ধের দামামা বাজতেই নতুন বুকিং নেই। যে বুকিং রয়েছে সেগুলো কতটা শেষ পর্যন্ত টিকবে বলা মুশকিল। কারণ, যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে।” গ্রীষ্মের মরশুমে ডুয়ার্সে বুকিং অনেকটা কম থাকে। কিন্তু কয়েকদিনের যুদ্ধ শুরুর পরিস্থিতির ধাক্কায় এবার বুকিং ‘নেই’ বললেই চলে। লাটাগুড়ি রিসর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দে বলেন, “পর্যটকরা ঝুঁকি নিতে চাইছে না। ওই কারণে বুকিং নেই বললে চলে।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)