• ২৩ বছরের চাপা কষ্টের অবসান! অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যে খুশি ঝাড়গ্রামের শহিদ পরিবার
    প্রতিদিন | ০৯ মে ২০২৫
  • সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: পাকিস্তানকে প্রত্যাঘাত করতে ভারতীয় সেনার অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যে দীর্ঘদিনের চাপা কষ্ট যেন সরে গেল ঝাড়গ্রামের শহিদ পরিবারের। ২৩ বছর আগে সীমান্তে জঙ্গি হামলায় স্বামীকে হারিয়েছিলেন দুই নাবালকের মা, সিঁথির সিঁদুর মুছে গিয়েছিল ঝাড়গ্রাম শহরের সুভাষপল্লির বাসিন্দা অঞ্জুরানি বিশ্বাসের। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল গত ২২ এপ্রিল, কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে। তার পালটায় পাক সীমান্তে ভারতীয় সেনার অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য দেখে অঞ্জুরানি বলছেন, ”আমার সিঁদুর মুছে দিয়েছিল পাক জঙ্গিরা। পাহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর ভীষণই মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তবে অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য দেখে আমি খুবই আনন্দিত।”

    সিআরপিএফের ৪৯ নম্বর ব্যাটালিয়নের হেড কনস্টেবল সুনীলচন্দ্র বিশ্বাস ছিলেন অঞ্জুরানির স্বামী। জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরিতে পোস্টিং ছিল তাঁর। দিনটা ছিল ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখ। সবে ভোর হচ্ছে। আচমকা পাক-জঙ্গিরা হানা দিয়েছিল রাজৌরির সিআরপিএফ শিবিরে। সেখানকার অস্ত্রভাণ্ডারের দায়িত্বে থাকা হেড কনস্টেবল সুনীলকে গুলিতে ঝাঁজরা করে দিয়েছিল জঙ্গিরা। ওই শিবিরের আরও আটজন জওয়ান ওই ঘটনায় শহিদ হন।

    দেশরক্ষায় স্বামী শহিদ হয়েছেন, এই খবর জেনে গর্ব নয়, অঞ্জুরানিদেবী তখন দিশেহারা। ১২ বছর ও ৭ বছরের দুই ছেলে সুমন ও শুভঙ্করের তখন কিছু বোঝার মত পরিস্থিতি নেই। তারা জেনেছিল, পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিরা কাপুরুষের মত ভোররাতে হানা দিয়ে তাদের বাবাকে কেড়ে নিয়েছিল। সুনীলের দাদা বিমলচন্দ্র বিশ্বাস সুমন ও শুভঙ্করকে ভেসে যেতে দেননি। ফল ব্যবসায় টাকায় সংসার চালিয়ে মানুষ করে তোলেন দুই ভাইপোকে। স্বামীর মৃত্যুর পর অঞ্জু পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন লক্ষ টাকা আর ফ্যামিলি পেনশন। সেই সামান্য টাকায় সংসার চলত না। তাই বিড়ি বেঁধেও সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল। এখন ঝাড়গ্রাম শহরের সুভাষপল্লিতে এক চিলতে বাড়ি করে সেখানে দুই ছেলে ? দুই বউমা ও এক নাতিকে নিয়ে থাকেন অঞ্জুরানি। বড় ছেলে সুমন টোটো চালান। ছোট ছেলে শুভঙ্কর স্টেট ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের অপারেটর।

    ‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রসঙ্গে অঞ্জুরানি বলছেন, ‘‘পাকিস্তান কাপুরুষের মত জঙ্গিদের দিয়ে হামলা চালায়। আমার সিঁদুর মুছে দিয়েছিল পাক জঙ্গিরা। পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর ভীষণই মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তবে অপারেশন সিঁদুরে পরপর সাফল্য দেখে আমি খুবই আনন্দিত। জঙ্গিদের নিকেশ করুক ভারতীয় সেনা। তবে আমি কিছুটা শান্তি পাব।’’ শুভঙ্কর বলছিলেন, ‘‘বাবাকে ওরা (জঙ্গিরা) কাপুরুষের মতো হত্যা করেছিল। বাবা ডায়েরি লিখতেন। সেই ডায়েরি পড়ে জেনেছি, বাবা সীমান্ত সুরক্ষায় অনেকবার লড়াই করেছেন। একাধিকবার হামলার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। কিন্তু পাক জঙ্গিদের অতর্কিত হামলাতেও বাবা লড়াই করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এমন বাবার সন্তান হিসেবে আমি গর্বিত। পাক জঙ্গিদের ভারতীয় সেনা গুঁড়িয়ে দিলে আমরাও মানসিকভাবে শান্তি পাব।’’
  • Link to this news (প্রতিদিন)