• মায়ের কাঁথা সেলাইয়ের রোজগারে চলে সংসার, ৬৭২ পেয়ে চমক মানবাজারের সব্যসাচীর
    বর্তমান | ০৯ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, পুরুলিয়া: বাবা বহুদিন ধরে অসুস্থতার কারণে তেমন কাজ করতে পারেন না। মা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাঁথা সেলাই করেন। সেই রোজগারেই কোনওমতে সংসার চালানোর পাশাপাশি স্বামীর ওষুধের টাকা জোগাড় করেন। পড়ার ফাঁকে মাকে কাঁথা সেলাইয়ে সাহায্যও করতে হতো মানবাজার-১ ব্লকের বারি শশীভূষণ হাইস্কুলের ছাত্র সব্যসাচী কুমারকে। অভাবের সঙ্গে লড়াই করেই এবার মাধ্যমিকে ৬৭২ পেয়ে তাক লাগিয়েছে সব্যসাচী। বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চাইলেও সে আগামী দিনে কীভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে-তা নিয়ে চিন্তিত পরিবার।

    সব্যসাচী ইংরেজিতে ৯০, জীবন বিজ্ঞানে ৯৪, বাংলায় ৯৫, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৬, ভূগোলে ৯৮, ইতিহাসে ৯৯ ও গণিতে ১০০ নম্বর পেয়েছে। সব্যসাচীর দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তার বাবা চৈতন্য কুমার বহুদিন ধরে অসুস্থ। মা ভারতীদেবীর কাঁথা সেলাইয়ের রোজগারে তিনজনের সংসার চলে। সব্যসাচী বলল, বাবা অসুস্থ থাকায় সংসারে অভাব রয়েছেই। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মায়ের সঙ্গে কাজে বাড়ি বাড়ি যেতে হতো। মাঝে মাঝে স্কুলেও যেতে পারতাম না। মাকে সাহায্য করতে হতো। এছাড়া, কেউ অর্ডার দিলে জিনিস পৌঁছে দেওয়ার কাজও করতে হতো। আমি বড় হয়ে চিকিৎসক হয়ে গরিব মানুষের সেবা করতে চাই। চিকিৎসা করাতেই যে অনেকের বহু টাকা খরচ হয়ে যায়, তা নিজেদের পরিবার দেখেই খুব ভালো করে বুঝতে পারি। অনলাইনে কোচিং নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।

    পড়াশোনায় অনেক বাধা এলেও সে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ভারতীদেবী বলেন, অভাবের সংসার। একা হাতে সংসারের সব খরচ সামাল দেওয়া মুশকিল। ছেলেটার বাইরে ভালো স্কুলে পড়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু, সামর্থ্য কোথায়? বারি শশীভূষণ হাইস্কুলের টিআইসি উত্তমকুমার মাহাত বলেন, সব্যসাচী পঞ্চম শ্রেণিতে এই স্কুলে ভর্তি হয়। ওদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। কোথাও টিউশনি পর্যন্ত নিতে পারেনি। স্কুলের শিক্ষকরা‌ই প্রয়োজনীয় বই সহ অন্যান্য জিনিসপত্র দিয়ে সাহায্য করেছেন। তবে সব্যসাচী খুব মেধাবী ছাত্র। পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনে পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ পেলেও টাকা জোগাড় করতে না পেরে ভর্তি হতে পারেনি। স্কুলের তরফে সব্যসাচীর পাশে থাকার চেষ্টা করা হয়। কোনও সহৃদয় ব্যক্তি বা সংস্থা ওর পড়াশোনায় সহযোগিতা করলে ছেলেটা অনেকদূর যেতে পারবে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)