লক্ষ্য বাল্যবিবাহ ও স্কুলছুট আটকানো, মেয়ের ১০ বছর হলেই পোর্টালে নাম
বর্তমান | ০৯ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বধর্মান: মাঝপথেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে নাবালিকাদের অনেকেই বিয়ের পিঁড়িতে বসছে। বছর ঘুরতে না ঘুরতে অনেকে সন্তানসম্ভবাও হয়ে উঠছে। অনেকেই এর পরিণামে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট এবং বর্ধমান-১ ব্লকে এই প্রবণতা বেশি। এই সমস্যা গোড়াতেই নির্মূল করতে চাইছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। শীর্ষ কর্তারা বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ১০ বছর বয়স থেকে প্রতিটি ছাত্রীর নাম নির্দিষ্ট একটি পোর্টালে আপলোড করা হবে। তাদের উপর নজরদারিও চলবে। তারা স্কুলে আসছে কি না, সেটাও আধিকারিকরা খোঁজ নেবেন। কেউ আচমকা স্কুলে আসা বন্ধ করে দিলে আধিকারিক বা শিক্ষক-শিক্ষিকারা তার বাড়িতে যাবেন। কেন তারা স্কুলে যাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা হবে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানি বলেন, ড্রপআউট এবং নাবালিকাদের বিয়ে বন্ধ করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্কুলগুলিতে কর্মশালা করা হচ্ছে। অল্প বয়সে বিয়ে হলে তার পরিণাম কী হতে পারে, সেটা বুঝিয়ে বলা হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা একটি পোর্টাল তৈরি করব। তাতে ১০ বছর বয়সের নাবালিকাদের নাম নথিভুক্ত করা হবে। সেটির মাধ্যমে নিয়মিত নজরদারি চালানো হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যেসব এলাকায় নাবালিকাদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বেশি, সেখানে বেশি করে নজরদারি চলবে। কোনও ছাত্রী তিন চারদিন স্কুলে না এলে তাঁর বাড়িতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা পৌঁছে যাবেন। করোনার পর থেকে নাবালিকাদের বিয়ে করার প্রবণতা বেড়েছে। অনেকে নিজের ইচ্ছেয় বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছে। কোথাও কোথাও আবার বাড়ির লোকজনরাও নাবালিকাদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি প্রশাসন আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম, বর্ধমান-১ ব্লকে নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করেছে। এক আধিকারিক বলেন, বিয়ে বন্ধ করার পর পরিবারের লোকজনদের কাছে থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও অনেকে গোপনে বিয়ে করছে। তাতে মেয়ের ক্ষতি হলেও পরিবারের লোকজনদের হেলদোল নেই। সেই কারণেই এবার প্রশাসন কড়া পদক্ষেপের দিকে হাঁটছে। পোর্টালে নাম থাকা সমস্ত নাবালিকার সঙ্গে প্রয়োজনে আধিকারিকরা কথা বলবেন। তাদের নাম এবং ফোন নম্বর পোর্টালে থাকবে। ফোন নম্বর ধরে যোগাযোগ করা হবে। অভিভাবকদের মোবাইল নম্বরও নথিভুক্ত থাকবে। কোনও ছাত্রীর কাছে মোবাইল থাকলে তার নম্বর পোর্টালে উল্লেখ থাকবে।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোনার বলেন, নাবালিকাদের বিয়ে বন্ধ করার জন্য আমরা কন্যাশ্রী ক্লাবগুলিকে সক্রিয় করেছি। তারা বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। তার সুফল আমরা পাচ্ছি। মেয়েদের পড়াশোনার জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প চালু করেছে।
অভিভাবক সুমন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, কিছু বাবা-মা তাঁদের কন্যাসন্তানদের পড়াশোনার থেকে বিয়ে দেওয়াকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। জেলা প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নিলে নাবালিকাদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে। পোর্টালে সমস্ত নাবালিকার নাম নথিভুক্ত থাকলে অভিভাবকরা অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার সাহস দেখাবেন না।