• মদের টাকা দেননি মা, মাথায় বাঁশ মেরে খুন
    বর্তমান | ০৯ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: মদ কেনার টাকা দিতে না পারায় বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে মাকে খুন করল ছেলে। ছেলের হাত থেকে বাঁচার জন্য আর্তনাদ করেও রেহাই পাননি ওই মহিলা। বাড়ির মধ্যে খুনের পর বাইরে বেরিয়ে এসে গুণধর ছেলের স্বীকারোক্তি, ‘ফুটিয়ে দিয়েছি’। পাঁশকুড়া থানার উত্তর হাউর গ্রামের ওই ঘটনায় হতবাক এলাকাবাসী। নিহত প্রৌঢ়ার নাম মালতি মুর্মু(৫৪)। তাঁর স্বামী ভাগবত মুর্মু নিজের ছেলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিস ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ভানু মুর্মুকে গ্রেপ্তার করেছে। পাঁশকুড়া থানার আইসি সমর দে বলেন, বুধবার ধৃত ভানুকে তমলুক সিজেএম কোর্টে তোলা হয়। বিচারক সাত দিনের পুলিসি হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। আমরা ধৃতকে জেরা করে আরও বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করছি।

    পুলিস ও স্থানীয় জানা গিয়েছে, ভানু প্রায়ই মদ খেয়ে মাকে মারধর করত। ছেলের হাতে মার খাওয়ার পর মালতিদেবী একাধিকবার হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছেন। মদের টাকা জোগাড় নিয়ে অশান্তি হতো। গত ৬মে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ বাড়ির বাইরে বসেছিলেন গৃহকর্তা ভাগবতবাবু। সেই সময় ঘরের মধ্যে স্ত্রীর আর্তনাদ শুনতে পান। তারপরই ঘরে ভিতর থেকে ছেলে বেরিয়ে এসে জানিয়ে দেয়, সে মাকে খুন করে ফেলেছে। ভাগবতবাবু বাড়ির ভিতর ঢুকে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় স্ত্রী মেঝেতে পড়ে রয়েছে। স্থানীয় একজন গ্রামীণ চিকিৎসক এসে জানান, ওই প্রৌঢ়ার মৃত্যু হয়েছে। পাঁশকুড়া ব্লকের হাউর এবং ঘোষপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকায় এখনও চোলাইয়ের অবাধ কারবার চলছে। বহু যুবক তাতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। কেউ টাকার জন্য বাড়ির জিনিসপত্র বিক্রি করে দিচ্ছে, আবার কেউ কেউ চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে। মায়ের কাছে মদ কেনার টাকা চেয়েছিল ভানু। তা না পাওয়ায় গণ্ডগোলে জড়িয়ে মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করে খুন করে বলে অভিযোগ।

    পাঁশকুড়ার হাউর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছন্দা জানা মণ্ডল বলেন, ধৃত যুবক মদ খেয়ে প্রায়ই মাকে মারধর করত। বেশ কয়েকবার এজন্য মালতিদেবী চিকিৎসা করিয়েছেন। অভিযুক্তকে এনিয়ে কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু, তাতে কোনও কাজ হয়নি। এই এলাকায় বেশকিছু জায়গায় অবৈধ মদের জোগান রয়েছে। পয়সা ফেললেই পাওয়া যাচ্ছে। ভানু সেইসব জায়গা থেকে মদ কিনে খেত। টাকার জন্য বাড়িতে অশান্তি করত। মা টাকা দিতে না পারায় মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করে খুন করেছে। 

    উত্তর হাউর গ্রামের বাসিন্দা রাজু মুর্মু বলেন, মায়ের সঙ্গে ঝামেলার সময় ভানুর হাতে বাঁশ ছিল। আচমকা মাথা গরম করে সেই বাঁশ দিয়ে মায়ের মাথায় আঘাত করে। চিৎকার করেই লুটিয়ে পড়েন মালতিদেবী। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। রক্তে ভেসে যায় গোটা মেঝে। ভাগবতবাবু ছেলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ জানানোর পর পুলিস ভানুকে গ্রেপ্তার করেছে।
  • Link to this news (বর্তমান)